আগামী কাল পশ্চিমবঙ্গের ছেলেমেয়েরা যাঁরা পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার প্রিলিতে উত্তীর্ণ হয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় বসছেন তাঁরা চূড়ান্ত সফল হওয়ার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছেন। আমি একটা সময় বিশ্বাস করতাম এবং আজও বিশ্বাস করি পশ্চিমবঙ্গে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষাটা কাঠিন্যতার দিক থেকে অনন্য।এর মাধ্যমে যেভাবে বিচার করা হয় তাতে ছাত্রছাত্রীরা এই পরীক্ষায় যদি পাশ করে তাহলে কিন্তু ভারতবর্ষের যে-কোনো পরীক্ষায় পাশ করতে পারে সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই। এই কথাটা শোনার সাথে সাথে যাঁরা আগামী কাল পরীক্ষায় বসবেন তাঁরা হয়ত আরও গভীর চিন্তায় পড়তে পারেন বা ভাবতে পারেন যে খুব কঠিন প্রশ্নপত্র আসবে, আমি আসলে বোঝাতে চাইছিলাম পশ্চিমবঙ্গে পিএসসি পার্ট ওয়ান ও পার্ট টুতে প্রশ্নপত্র তৈরি করার যে দৃষ্টিভঙ্গি এবং একটি ছাত্রছাত্রীদের মেধাবিচার করার জন্য যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করা হয় সেটাই যে-কোনো পরীক্ষায় পাশের ক্ষেত্রে সহায়ক হয় বলে আমার মনে হয়, আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় সেটা প্রমাণিত।
পরীক্ষার ২৪ ঘণ্টা আগে এই নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা না করে আমি শুধু বলতে চাই এবারের পরীক্ষাটা বাংলা এবং ইংরেজিতে হবে, আপনারা ডেসক্রিপটিভ পার্ট পরীক্ষার জন্য বসছেন, দুটো জিনিস আপনাদের মাথায় এখন ঘুরছে, এক এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ছটা বিভাগের প্রশ্ন লিখতে হবে সেটা কিভাবে ম্যানেজ করবেন আর দু নম্বর কোন কোন বিষয়বস্তুর উপর রচনা বা এসে আসতে পারে সেটা নিয়েও আপনারা হয়ত ভাবছেন।
তুমি তোমার বেস্টটা দাও
প্রথমেই প্রশ্ন প্রসঙ্গে বলি যে এক ঘণ্টার মধ্যে ৬টা প্রশ্ন লেখা সত্যি খুব কষ্টের, আমার মনে হয় পরবর্তী সময়ে রাজ্য সরকারের এই বিষয়ে আরও যত্নবান হওয়া দরকার, কারণ কোনো প্রার্থীকে ডেসক্রিপটিভ পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে তার ডেসক্রিপটিভ লেখার ক্যাপাবিলিটি সত্যি যদি বিচার করতে হয় তাহলে এই পরীক্ষাটা তিন ঘণ্টার হওয়া উচিত যেটা আগে ফলোআপ করা হত। আমি ছাত্রছাত্রীদের বলব যে ৬টা বিভাগেই আপনারা চেষ্টা করবেন উত্তর দিতে এবং সেটাকে কিভাবে স্ট্যাটিসফাইড করা যায় অল্প সময়ের মধ্যে। আট থেকে দশ লাইনের মধ্যে কিভাবে লেখা যায় সেরকম একটা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যদি আমরা পরীক্ষায় ক্যালকুলেশন করতে আরম্ভ করি তাহলে কিন্ত ৬টা বিষয়বস্তুকেই আপনারা ছুঁয়ে যেতে পারবেন।
ইতিহাসের বিষয় যদি বলি, হুমায়ুনের রাজত্বকাল, ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকাল, পাতার পর পাতা লেখা রয়েছে। এখন প্রতিটি পাতায় নীচে বুলেট পয়েন্ট থাকে, যে এই তিনটে ঘটনা ঘটেছিল, ওই তিনটে বুলেট পয়েন্টের ভিত্তিতে দেখা যায় একটা পাতায় আরও ৩০টা লাইন লেখা রয়েছে।
কালকের পরীক্ষায় বুলেট লাইনের উপর উত্তর করতে হবে, ওই একটা বুলেট পয়েন্টের উপর ৩০টা লাইন লেখার সুযোগ আর পাবেন না। জানি কালকের পরীক্ষায় সামারি বা প্রেসি আছে, ট্র্যানস্লেশন আছে।
উত্তর লেখাটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার আমি জানি, সেই সঙ্গে বলব যারা পরীক্ষায় বসছেন সবার কাছেই এটা চিন্তার, সবাইকেই ওই এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করতে হবে। তাহলে যেটা আমাদের হাতের বাইরে সেটা কিভাবে কন্ট্রোল করব সেটা না ভেবে, যে এক ঘণ্টা না হয়ে যদি তিন ঘণ্টা হত, তিন ঘণ্টা না হয়ে যদি ৬ ঘণ্টা হত, সেটা না ভেবে আপনি ভাবতে শুরু করুন এই এক ঘণ্টার মধ্যে যে-কোনো প্রতিযোগীর থেকে আপনার উত্তরপত্র কিভাবে ভালো হবে, এভাবে ভাবতে থাকলে অনেকটা সমাধানের পথ আপনারা পাবেন। দ্বিতীয়ত প্রেসি বা রিপোর্টিংয় লেখার ক্ষেত্রে আপনার তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং কঠিন জিনিস সহজে প্রাঞ্জলভাবে কিভাবে পেজেন্ট করবেন আপনার এই দক্ষতাই দেখা হবে, যেমন সরকারি কর্মী হিসেবে জয়েন করার পর আপনাকে অনেক রিপোর্ট লিখতে হবে, কোন ফরম্যাটে লিখলে অল্প সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে কাজ শেষ করা যাবে সেটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে।
শেষ সময়ে ঝালিয়ে নেওয়া বা বেশি করে মাথায় রাখতে হবে
এবার আসি কী ধরনের রিপোর্ট বা এসে আসতে পারে সেই বিষয়ে, আমি বলব এখন প্যানডেমিকের উপর প্রশ্ন আসতে পারে, পলিউশনের উপর প্রশ্ন আসতে পারে, আবার নতুন এডুকেশন পলিসির ভালো মন্দের উপর প্রশ্ন আসতে পারে, আমফান ঝড় নিয়ে, আর রাজ্য সরকার যেহেতু এই পরীক্ষাটা কনডাক্ট করে তাই রাজ্য সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা পলিশি তার ভালো মন্দ, যে সমস্ত প্রকল্প আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃতি পেয়েছে এইসব জিনিসগুলো যদি ভালো করে চর্চা করে যান তাহলে আগামী কাল এই সবের উপর একটা প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমি আশা রাখি আপনারা ভালো করে পরীক্ষা দেবেন, সবার শুভেচ্ছা সাফল্য কামনা করে বলব ভালো করে পরীক্ষা দিন।
– প্রফেসর সমিত রায়
চেয়ারম্যান, রাইস
আচার্য, অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়