৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশবাসী দেখল এক অন্যরকম দিন। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা ঐতিহাসিক লালকেল্লা (Red Fort) চত্বরে। বিগত কয়েক মাস ধরে চলছে নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের সম্মিলিত আন্দোলন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ জনুয়ারি কৃষকরা “ট্রাক্টর” মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৬ তারিখ বেলা বাড়ার সাথে-সাথে আন্দোলন ও মিছিল বিরূপ আকার ধারণ করে। কৃষকদের মিছিলের অভিমুখ লালকেল্লা পর্যন্ত যাওয়ার কোনো অনুমতি দিল্লি পুলিশের ছিল না। লালকেল্লার মধ্যে ঢুকে আন্দোলনকারীদের (Farmers agitation) মধ্যে একাংশ চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। লালকেল্লার যে স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়, সেখানে তারা নিজেদেরও একটি পতাকা লাগিয়ে দেন।
কিষান মোর্চা সহ বিভিন্ন আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠন এই ঘটনার নিন্দা করে এবং এই ঘটনার সঙ্গে তাদের সক্রিয় যোগাযোগ অস্বীকার করে। তাদের দাবি, কিছু উগ্রবাদীরা এহেন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়। সাবোতাজের অভিযোগও উঠেছে। অন্যদিকে, দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় ৩০০ পুলিশ, আধা সেনা এই আন্দোলনকারীদের রুখতে গিয়ে আহত হয়েছেন। বিপরীতপক্ষে পুলিশের গুলি চালানোর মতো ঘটনার খবরও পাওয়া গেছে। মোট ২২টি মামলা রুজু করা হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পরদিন আরও ১২ কোম্পানি অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করে লালকেল্লার নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ভারতের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান লালকেল্লা (Redfort)। ১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে এই লালকেল্লাতেই পতাকা উত্তোলন করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। সেই পবিত্র স্থানে এ হেন বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি চূড়ান্ত অনভিপ্রেত ও অসম্মানের। কেন কোন ঘটনাপরম্পপরার ফলে এই জায়গায় আন্দোলন পৌঁছল সেই প্রশ্নও থেকে যায়। নেওয়া যাক লালকেল্লা সম্বন্ধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
১) স্বাধীনতার পূর্বে মোঘল রাজবংশের অন্যতম বাসস্থান। আগ্রা থেকে দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পর মোঘল সম্রাট লালকেল্লায় বাস করতেন।
২) ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মোঘল সম্রাট শাহ জাহান লালকেল্লা নির্মাণের উদ্যোগ নেন। প্রায় নয় বছর ধরে নির্মিত হয় এই ঐতিহাসিক কেল্লা। কেল্লাটি জ্যামিতিক আকার অনুযায়ী অষ্টভুজ বা “Octagonal”.
৩) লালকেল্লার প্রধান নির্মাণশিল্পী উস্তাদ আহমেদ লহরী। তাঁর উদ্যোগেই ঐতিহাসিক “তাজমহল” নির্মিত হয়েছিল।
৪) মোঘলদের পর মারাঠা, শিখদের হাত থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের হাতে আসে এই কেল্লা। ৪৭ সালের পর স্বাধীন ভারত সরকার লালকেল্লার দায়িত্ব নেয়।
৫) লাল রঙের বেলেপাথর দিয়ে নির্মিত হয়েছে এই বিশাল আকার কেল্লা, যে কারণে এই কেল্লার এ হেন নামকরণ। যদিও আর্কিওলোজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া পরে জানায়, কেল্লা প্রধানত সাদা চুনাপাথর দিয়েই নির্মিত হয়েছিল, বাইরের বিশালাকার প্রাচীর হয়েছিল লাল পাথর দিয়ে। ব্রিটিশ আমলে কেল্লার মূল অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে লাল রং করে দেওয়া হয়।
৬) ২০০৭ সালে এই কেল্লাকে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বলে ঘোষণা করা হয়।
৭) ১৯৪৭ সালে, ১৫ আগস্ট স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরু লালকেল্লায় স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। সেই ট্র্যাডিশন আজও চলে আসছে।
৮) ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের “Adopt a Heritage” প্রকল্পের অধীনে ডালমিয়া ভারত গ্রুপ এই কেল্লার তত্ত্বাবধান, উন্নয়ন ও মেরামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছে ৫ বছরের জন্য।
৯) ২০০০ সালে ২২ ডিসেম্বর লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি গোষ্ঠীর ৬ জন জঙ্গি লালকেল্লায় সন্ত্রাসী হামলা চালায়। হামলায় ২ জওয়ান ও ১ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়।
১০) বলা হয়, বিখ্যাত “কোহিনুর” হীরক একসময় এই লালকেল্লাতেই ছিল।
Redfort, Redfort massacre