বাংলা ও বাঙালির মননে সুরের মূর্চ্ছনায় এবং কণ্ঠের জাদুতে যিনি মুগ্ধ করেছেন তিনি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukhopadhaya)। সমগ্র ভারতীয় সংগীতকে যাঁরা সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদের মধ্যে তিনিও একজন। তাঁর নামের সঙ্গে সঙ্গেই ফেরে `গীতশ্রী’ সাম্মানিক শিরোপা। ১৯৪৬ সালে `গীতশ্রী’ সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন। দীর্ঘ সাত দশকের সংগীত জীবনে তিনি শিশুকাল থেকেই তাঁর কণ্ঠের প্রতিভা রেখেছিলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে রেডিয়োতে `গল্পদাদুর আসরে’ প্রথম যে গান গেয়েছিলেন `যদি বা ফুরালো গান/ ঝরিল দুয়ারে পাতা’। সেই গান গেয়ে পেয়েছিলেন পাঁচ টাকা সাম্মানিক। ১৩ বছর বয়সে তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয়েছিল এইচএমভি থেকে ১৯৪৫ সালে। তিনি ধ্রুপদী সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। পাশাপাশি বডে গোলাম আলির কাছেও ধ্রপদী গানের তালিম নিয়েছিলেন।
প্রথম মুক্তি পাওয়া প্লেব্যাক বাংলা ছবি `সমাপিকা’। প্রথম প্লেব্যাক `অঞ্জনগড়’ ছবি।
১৯৫১ সালে নজরুল গীতির প্রথম রেকর্ড বের হয়। তার আগে ১৯৫০ সালেই তিনি বাঙালির ঘরে ঘরে নিজের গানের প্রতিভার পরিচয় রেখেছেন। ১৯৫০ সালে রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুর `ওগো মোর গীতিময়’ এই গানটি তাঁকে রাতারাতি বাঙালির কাচ পরিচিতি এনে দেয়। শুধু তাই নয়, দশকের পর বিভিন্ন সুরকারের সুরে অসংখ্য গান তিনি উপহার দিয়েছেন যা কণ্ঠে কণ্ঠে ফিরেছে।
বাংলা গানের পাশাপাশি তিনি যেমন হিন্দি গান গেয়েছেন তেমনই ভজনও গেয়েছেন। শচীন দেব বর্মণের আমন্ত্রণে ১৯৫০ সালে মুম্বইয়ে হিন্দি ছবির প্লেব্যাক গেয়েছিলেন। মোট ১৭টি হিন্দি ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন।
রবীন্দ্র, নজরুল গীতি, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, দ্বিজেন্দ্রগীতি, হিন্দি ভজন ছায়াছবি মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
তাঁর দীর্ঘ গানের জীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সেরা প্লেব্যাক গায়িকার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন `নিশিপদ্ম’ ও `জয়জয়ন্তী’ ছবির জন্য।
পেয়েছেন রাজ্য সংগীত আকাদেমি পুরস্কার। আলাউদ্দিন পুরস্কার ও এইচএমভির প্ল্যান্টিনাম ডিস্ক।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট সম্মানে ভূষিত করেছিল। পেয়েছেন এইচএমভি `লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ পুরস্কার। ২০১১ সালে রাজ্য সরকারের `বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান। সম্প্রতি ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া `পদ্মশ্রী’ সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
তাঁর বয়স হয়েছল ৯০ বছর। জন্ম ১৯৩১ সালে ৪ অক্টোবর, কলকাতার ঢাকুরিয়ায়।