সত্যজিৎ রায়

schedule
2022-05-02 | 13:02h
update
2022-05-02 | 13:02h
person
জীবিকা দিশারী
domain
জীবিকা দিশারী

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাঙালি দুই প্রতিভার পরিচয় স্মরণে উঠে আসে দুটি নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সত্যজিৎ রায়।

ভারত ও বিশ্বব্যাপী বাঙালির কাছে এই দুই প্রতিভার অহঙ্কার উজ্জ্বল হয়ে প্রতিভাত। রবীন্দ্রনাথ ৭ মে ১৮৬১। আর সত্যজিৎ রায় ২ মে ১৯২১।

দ্বিতীয়জন প্রথমজনের গড়ে তোলা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার জন্য গেলেও সেখানে শিক্ষা শেষ না করেই চলে এসেছিলেন নিজের জগতে।

কিন্তু সেই বিশ্বভারতীতেই পেয়েছিলেন শিল্পের দুই দিগন্ত পুরুষ নন্দলাল বসু ও বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পশিক্ষককে।

শান্তিনিকেতন ছেড়েও  চলে এসেছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি। বাংলা শিশুসাহিত্যের রূপকথার জাদুকর পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চেধুরী, পিতা বিস্ময়প্রতিভাধর সুকুমার রায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন সত্যজিৎ রায়।

Courtesy: Outlook India

ছোটবেলা থেকেই শিল্প-সাহিত্যের পরিমণ্ডলে বড় হয়ে ওঠেন। কলকাতায় প্রথম জীবনে প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে পড়া শুরু করলেও সেখানকার পাঠ অসমাপ্ত রেখেই বিশ্বভারতীতে পড়তে যান।

Advertisement

কিন্তু সেখান থেকেও চলে এসেছিলেন পড়া অসমাপ্ত রেখেই। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল জীবন। তারপরই পাল্টাল জীবনের গতিপথ।

এক ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন কোম্পানির ভিশুয়ালাইজার হিসাবে কর্মজীবন শুরু ৮০ টাকা বেতনে। শন্তিনিকেতনে পড়ার সময়ে ফরাসি চলচ্চিত্র পরিচালক জঁ রেনোয়ার সঙ্গে পরিচয় এবং সিনেমা সম্বন্ধে নানান কৌতূহল, উৎসাহ। আর সেই উৎসাহ নতুন করে জেগে উঠল লন্ডনে থাকালীন। চাকরিসূত্রে লন্ডনে যাওয়া এবং সেখানে এক মাসে শতাধিক ছবি দেখে ফেলেছিলেন তিনি।

সেখানে ইতিালীয় পরিচালকের তৈরি ‘বাইসাইকেল থিফ’ ছবি দেখে চলচ্চিত্র বানাবার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী দিয়ে। প্রথম ছবিইতেই বাজিমাত। ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারের মধ্য দিয়েই তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতিকে আদায় করে নিয়েছেন।

তারপর আর থেমে থাকেননি। অপু ট্রিলজি-র পথ পেরিয়ে তৈরি করেছেন একের পর এক দৃষ্টান্তস্থানীয় ছবি। ‘চারুলতা’ সৃষ্টি এবং পরবর্তী জীবনে বৈচিত্র্যসন্ধানেও বার বার নিজেকে, নিজের ভাবনাকে তুলে ধরেছেন বিভিন্ন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।

ডকুমেন্টারি ও ফিচার ফিল্ম সহ মোট ৩৭টি ছবি করেছেন এবং তারিফ আদায় করে নিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের আপামর চলচ্চিত্রপ্রেমী ও দর্শক-বোদ্ধাদের।

চিত্রনাট্য রচনা, সংগীত স্বরলিপি রচনা, চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা সহ চলচ্চিত্রের সব মহলেই দক্ষতা ও পারদর্শিতার বিচারে বিভিন্ন বছরে সম্মান ও স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন পদ্মশ্রী, গোল্ডেন লায়ন, পদ্মবিভূষণ, ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফিচার ফিল্ম।

ন্যাশনাল বেস্ট অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ডিরেক্টর, দাদা সাহেব ফালকে, ফরাসি সর্বোচ্চ সম্মান ‘লেজিওঁ দ্য’নর’ এবং ৭০ বছর বয়সে অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯২ সালে পেয়েছেন চলচ্চিত্রবিশ্বের সেরা সম্মান অস্কার। অক্সফোর্ড সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে।

চলচ্চিত্রের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে শিশুসাহিত্যিক, চিত্রকর, কল্পকাহিনি লেখক, গ্রাফিক ডিজাইনার সহ সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর বিভিন্ন গল্প-উপন্যাস আপামর বাঙালি পাঠককে বিমুগ্ধ সাহিত্যের স্বাদ দিয়েছে। তাঁর রচিত ও বর্ণিত জটায়ু, প্রফেসর শঙ্কু প্রভৃতি চরিত্র অনবদ্য সৃষ্টি।

উল্লেখ্য, শিল্পী সত্যজিৎ রায়  তাঁর সমস্ত বইয়ের ছবি ও প্রচ্ছদ নিজেই আঁকতেন। যেমন আঁকতেন চিত্রনাট্যের ছবি ও লোকেশনের ছবি। রে রোমন, রে বিজার দুটি টাইপ ফেস তৈরি করে পুরস্কার পেয়েছিলেন।

এই বহুমুখী প্রতিভার জন্মদিন ২ মে বাঙালির ক্যালেন্ডারে এক স্মরণীয় তারিখ। আরও দুটি কারণে এই দিনটি স্মরণীয় আজ থেকে ১৩২ বছর আগে এই এই দিনে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব পরমাত্মায় বিলীন হয়েছিলেন এবং ১৯৪৬ সালের কলকাতা সম্মুখীন হয়েছিল ভয়াবহ এক দাঙ্গার।

Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
jibikadishari.co.in
Privacy & Terms of Use:
jibikadishari.co.in
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
21.04.2024 - 21:06:23
Privacy-Data & cookie usage: