সোস্যাল মিডিয়া ভালো না খারাপ?

1504
0
Social Media uses

অনেক ক্ষেত্রেই সোস্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে ধীরে ধীরে একটা বড় শূন্যতা তৈরি করছে না কি? এ প্রশ্ন আজ বিশ্বজুড়েই। উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানী মহল থেকে শুরু করে ঘরোয়া জীবনেও।

দিন দিন মোবাইলের কার্যকারিতা যেমন বেড়ে চলেছে ঠিক তেমন গতিতেই আমাদের সোস্যাল মিডিয়ায় বা সামাজিক মাধ্যমে আকৃষ্ট হওয়ার সময়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা সামাজিক মাধ্যমে প্রচুর সময় ব্যয় করছেন তাঁদের সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনাও বেশ কয়েকগুণ বেড়ে চলেছে।

ফলে বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে মেলামেশার পাশাপাশি সৃষ্টিশীলতার মানসিকতাও দিন দিন ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে। যত বেশি অনলাইন তত বেশি নিজস্ব চিন্তায় ছেদ ঘটছে।

আর সেই নিজস্বতাই ব্যাধিরূপে বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে সমাজের নানা ক্ষেত্রে। ক্রমশ একে অপরের সঙ্গে কথা বলার, মনের ভাবের আদানের বিছিন্নতা ঘটছে।

এ দৃশ্য আজ হামেশাই চেনা যে, ট্রেনে-ট্রামে-বাসে বা কোনো একজায়গায় বন্ধুরা মিলিত হয়েও একে অপরের সঙ্গে কথা বলার থেকেও মোবাইল স্ক্রিনে নিমগ্ন থাকার ছবি।

মেবাইলে ফেসবুক বা হোয়াটস অ্যাপ-এ একটা পোস্ট দিলাম এবং তার প্রতিক্রিয়ার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করি ও-প্রান্ত থেকে কী উত্তর এল।

উত্তর এলে পুলকিত হই কিংবা বিরূপ উত্তর উত্তর এলে মর্মাহত হই। উদ্বিগ্নভাবে আমরা ফেসবুক চেক করি। সর্বদা সজাগ থাকি লাইক কত পড়ল।

এই অপেক্ষা কখনও কখনও আমাদের খুশি করে। উলটো দিকও আছে। এই যে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিন আমরা যে ভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছি তার একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তো রয়েছেই,

সেই সঙ্গে ক্রমশই আমরা সামাজিক সংযোগ থেকে নিজেকে জ্ঞাতে অথবা অজ্ঞাতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছি না তো?

এই প্রশ্ন ক্রমশই বিরাট আকার নিচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এই সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে আমরা শুধু সৃষ্টিশীল মানসিকতাই নয়, সমাজে বন্ধুবান্ধ্ব-আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগও হারাচ্ছি।

সম্প্রতি এক গবেষণায় বিশিষ্ট এক বিজ্ঞানী শ্যানন পপিটো বলেছেন, যখন একজন ব্যক্তি সোস্যাল মিডিয়াতে বেশি বেশি সময় ব্যয় করে, তখন সে শুধু আত্মীয়-বন্ধু থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ছে না,

নিজের সঙ্গেও ক্রমশ সে একা হয়ে পড়ছে। এই সোস্যাল মিডিয়া নিঃশব্দে আমাদের মধ্যে ক্রমশই এক একাকিত্বের বিষণ্ণতা এনে দিচ্ছে। বিশেষ করে এর প্রভাব পড়ছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।

তবে এ কথাও ঠিক, সোস্যাল মিডিয়া সম্পূর্ণ নেতিবাচক বা ক্ষতিকর নয়। এক দিকে যেমন অবসাদ আনে তেমনই অন্য দিকে একাকিত্বের অবসান ঘটিয়ে আনন্দও প্রদান করে।

সোস্যাল মিডিয়ার গুণেই আমরা অনেক হারানো বন্ধুত্ব, প্রিয় মানুষকে খুঁজে পাই। তেমনই নানা বৈচিত্রময় সংবাদ বিনোদন এবং বিশ্বজোড়া বিচিত্র ঘটনা আমাদের মনকে আলোড়িত করে।

অজানাকে জানতে সাহায্য করছে। শিক্ষা, ভ্রমণ বইপড়া সহ এমন অনেক অত্যাশ্চর্য সাইট রয়েছে সেগুলিতে চোখ রাখলে সত্যিই আমরা অনেক কিছু জানতে পারি।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার একাকিত্ব ঘোচাতেও অন্যতম উপযোগী মাধ্যম হয়েউঠছে এই সোস্যাল মাধ্যমে। রাজনৈতিক সচেতনতার বার্তা যেমন আছে, অনায়াসেই নিজস্ব মতামত আদান প্রদান করা যায়, তেমন অপব্যবহারে সামাজিক ভাবে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

বর্তমান সময়ে সোস্যাল মিডিয়া যেমন থাকা দরকার তেমনই এর থেকে সতর্ক থাকাও দরকার। সোস্যাল মিডিয়ার অনেক সুবিধা  এবং অসুবিধা আছে।

এখানেই প্রশ্ন ওঠে সোস্যাল মিডিয়া ভালো না খারাপ? এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালো দিকগুলি হল দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়া আত্মীয়, বন্ধু সহ অনেককেই এই ব্যস্ত বিশ্বে হাজারো কাজের মধ্যে সংযোগ ও খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

অনেক গ্রুপ তৈরি হয়েছে মানসিক আদানপ্রদান তৈরিতে একত্রিত হওয়ার। অন্য দিকে রয়েছে অনেক বিপদ সংকেত। তৈরি হয়েছে সাইবার বুলিং, গোপনীয় বিষয়কে প্রকাশ্যে আনার ভয়।

এই মুহূর্তে তারই নিদর্শ রূপে ঘুরছে `ডিপ ফেক’ নামক শব্দ ও তার কুফল। আপত্তিকর ছবি তুলে ছড়িয়ে  দেওয়া হচ্ছে।এতে সামাজিক হেনস্থা হতে হচ্ছে।

অতএব সোসাল মিডিয়া ব্যবহারে যথেষ্ট সজাগ হতে হবে। যাতে ব্যবহারকারী সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বা বিপদের সম্মুখীন না হন।