এসএসসি নিয়ে অস্বচ্ছতার গুচ্ছ-গুচ্ছ অভিযোগ, রিপোর্ট দিল ক্যাগ

1502
0
SSC, WBSSC, SSC Recrutiment, Teacher Recruitment in West Bengal, SSC West Bengal

 রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী নিয়োগের একাধিক বিষয়ে অসন্তোষ ও গরমিল রয়েছে জানিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ক্যাগ, Comptroller and Auditor General Of India)।

স্কুল সার্ভিস কমিশন ২০০৯ সাল থেকে চালু করে ইন্টিগ্রেটেড অনলাইন এগজামিনেশন সিস্টেম। একটি অনলাইনের সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজকর্ম হয়। মোট নয়টি সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়া নিয়োগ ও পরীক্ষার আইটি সিস্টেম নিয়ে অডিট চালায় ক্যাগ। এখানেই অসংখ্য ক্ষেত্রে গরমিল ধরা পড়েছে, যা ক্যাগ তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।

ক্যাগ রিপোর্টে অনুযায়ী, পরীক্ষাগুলি নিয়ে তারা যে অ্যাক্সেস কন্ট্রোল (ফিজিক্যাল ও লজিক্যাল) করেছে, তাতে চারটি বিষয় তারা তুলে ধরেছে—

১) স্বচ্ছ ও সঠিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা গ্রহণে ব্যর্থতা (Failure to ensure transparency and fair competition)

২) প্রাথীর জাতিগত শ্রেণি পরিবর্তনে অস্বচ্ছতা (Unauthorised change in caste category of candidates)

৩) এসএসসির ফর্মুলা অনুযায়ী নম্বর বিতরণ ও সিস্টেম ক্যালকুলেটেড নম্বরে পার্থক্য (Difference between marks to be awarded as per formula and marks calculated by the system)

৪) পার্সোনালিটি টেস্ট-এর জন্য অন্যায় ভাবে প্রার্থী নির্বাচন (Unfair selection for personality test)

প্রথম পয়েন্টে জানানো হয়েছে ৭,২৪৭টি কেসের মধ্যে ৫টি কেস পাওয়া গেছে, যেখানে লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বর ও চূড়ান্ত তালিকা নম্বরের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। এর মধ্যে একজন আবার রয়েছেন, যিনি কোয়ালিফায়িং নম্বর পেতে ব্যর্থ কিন্তু তাঁকে পার্সোন্যালিটি টেস্ট-এ ডাকা হয়েছে ও চূড়ান্ত তালিকায় নাম আছে।

দ্বিতীয় পয়েন্টে বলা হয়েছে, একাদশ আরএলএসটি পরীক্ষায় সাতটি উদাহরণ রয়েছে, যেখানে প্রার্থীরা নিজেদের আবেদন পত্রে তাঁদের যে কাস্ট উল্লেখ করেছেন, সেখান থেকে চূড়ান্ত প্রাথী তালিকায় তাঁদের কাস্ট /শ্রেণি ভিন্ন রয়েছে। যদিও ক্যাগ-এর এই রিপোর্টের বিষয়টি এসএসসিকে জানানো হলে তারা বিষয়টিকে ডেটা এন্ট্রির ভুল বলে সাফাই দেয়।

তৃতীয় বিষয়টি নিয়ে ক্যাগ বিস্তারিত যা রিপোর্ট দিয়েছে তা হল, দশম আরএলএসটি পরীক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড অপারেটিং এগজামিনেশন সিস্টেম এবং সিএএটি (CAAT) সিস্টেম অনুযায়ী নাম্বার বিভাজনের হিসাব আলাদা। ক্যাগ-এর অডিট অনুযায়ী ইস্টার্ন রিজিয়নে ৪২৯ জন, নর্দার্ন রিজিয়নে ৪৭৯ জন, সাদার্ন রিজিয়নে ৪৮৩ জন, ওয়েস্টার্ন রিজিয়নে ৬৪১ জন এবং সাউথ-ইস্টার্ন রিজিয়নে ৪৫১ জন প্রার্থী যাঁরা তালিকাভুক্ত হয়েছেন কিন্তু তাঁদের অ্যাকাডেমিক ও প্রফেশনাল কোয়ালিফিকেশন-এর ভিত্তিতে এসএসসির নিয়ম অনুযায়ী যে স্কোর ক্যালকুলেশন সেটা অমিল রয়েছে। এছাড়া ক্যাগ বলছে, একাদশ আরএলএসটি (অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার ) পরীক্ষায় মোট ৪৩ জন প্রার্থী রয়েছেন, যাঁরা পার্সোন্যালিটি টেস্ট-এর জন্য ডাক পেয়েছিলেন, তাঁদের এই অ্যাকাডেমিক স্কোর সিস্টেমে রেকর্ডই করা হয়নি। এর মধ্যে চূড়ান্ত তালিকায় ২৮ জন প্রার্থী চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত হয়ে গিয়েছেন। এই বিষয়টির ক্ষেত্রেও এসএসসি ক্যাগ-এর রিপোর্টে জানিয়েছে, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর-এর ভুল-এর বিষয়। এক একটি বোর্ড বা ইনস্টিটিউশনের গ্রেডিং সিস্টেম ভিন্ন হওয়াতে প্রার্থীর অ্যাকাডেমিক স্কোর ক্যালকুলেশন ভিন্ন হয়েছে বলে সাফাই এসএসসির।


চতুর্থ পয়েন্টে জানানো হয়েছে, প্রথম আরএলএসটি (ক্লার্ক) পরীক্ষায় ৩, ০৭, ১৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ১,১১০ জন প্রার্থী বেশি নম্বর পেয়েও পার্সোন্যালিটি টেস্ট ও টাইপ টেস্ট-এর জন্য ডাক পাননি। অন্যদিকে, ২৪ জন অযোগ্য প্রার্থী পার্সোন্যালিটি টেস্ট-এ ডাক পেয়েছেন। ১২ জন এমন প্রার্থীকেও পাওয়া গেছে, যাঁরা চূড়ান্ত মেধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এই বিষয়টি নিয়ে এসএসসি ক্যাগ-এর প্রত্যুত্তরে জানিয়েছে, কাট-অফ মার্ক্স অনুযায়ী শূন্যপদের ১.৫ গুণ প্রার্থী পাওয়া যায়নি। তাই ন্যূনতম মার্ক্স পেলেও সব প্রার্থীকে পিটির জন্য ডাকা যায়নি।

এই বিষয়গুলি ছাড়াও এসএসসির রিজিয়ন অফিস এবং সেন্ট্রাল অফিসের ডেটার মধ্যে অমিল, উপযুক্ত লগ ফাইল-এর অনুপস্থিতি, অনলাইন সিস্টেমের মধ্যে বারংবার ম্যানুয়াল ইন্টারভেনশন, উপযুক্ত ভ্যালিডেশন কন্ট্রোল, সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট ডকুমেন্টেশন, ডেটা ডিকশনারি এরকম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমস্যার কথা জানিয়েছে ক্যাগ।

ক্যাগ এই অডিট করেছে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত যা নিয়োগ পরীক্ষা ও প্রক্রিয়া হয়েছে সেগুলি নিয়ে, একটি পরীক্ষার সব নথি কমিশন দিতে না পারায় সেটির অডিট হয়নি। যাইহোক, তৈরি হওয়া রিপোর্ট এসএসসি তথা শিক্ষা দপ্তরের কাছে পাঠানোও হয়েছে, তদন্ত করতেও বলা হয়েছে একাধিকবার, কিন্তু তদন্ত হয়নি। দ্বাদশ পরীক্ষার পর এসএসসি ফল প্রকাশের ৬ মাসের মধ্যে সমস্ত নথি নষ্ট করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় (আগে নিয়ম ছিল ৩ বছর রক্ষা করার), এই সিদ্ধান্তও কোনোভাবেই স্বচ্ছতার স্বার্থে নয় বলে সিএজি মত প্রকাশ করেছে।

 

পাঠকদের জন্য দেওয়া হল, ক্যাগের সম্পূর্ণ রিপোর্টটির লিঙ্ক –
https://cag.gov.in/sites/default/files/audit_report_files/Chapter_2_Performance_Audits_of_Report_No_6_of_2018_General_and_Social_Sector.pdf  

 

 

 

SSC, WBSSC, SSC Recruitment, Teacher Recruitment in West Bengal, SSC West Bengal