মৃত্যুঞ্জয়ী সুভাষ: নানান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

schedule
2021-01-23 | 13:04h
update
2021-01-23 | 13:07h
person
জীবিকা দিশারী
domain
জীবিকা দিশারী

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের চিরস্মরণীয় কিংবদন্তী নাম হল সুভাষচন্দ্র বসু।স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন নিয়ে দেশের সেবায় যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আর এই মহান কর্মযজ্ঞে তাঁর অসামান্য নেতৃত্বদানের জন্যই তিনি আপামর ভারতবাসীর কাছে ‘নেতাজি’।
আজ ২৩ জানুয়ারি সেই মহামান্য নেতার ১২৫ তম জন্মদিন। তাঁর বীরত্বকে কুর্নিশ জানিয়ে এই দিনটিকে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে গত ১৯ জানুয়ারি, ২০২১ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে যে, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজির অবদানের কথা স্মরণ করে তাঁর জন্মদিনকে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দু’টি গ্যালারির উদ্বোধন করেন তিনি। অন্যদিকে, এদিনই নেতাজির সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করা আবিদ হাসানকে মরণোত্তর সম্মানে ভূষিত করে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে ‘নির্ভীক সুভাষ’ নামে গ্যালারির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যান্য বিপ্লবীদের নিয়ে অপর একটি গ্যালারির নাম রাখা হয়েছে ‘বিপ্লবী ভারত’। দুটি গ্যালারির উদ্বোধনের পর রবিবার থেকেই গ্যালারি দুটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী হাওড়া-কালকা মেলের নাম পরিবর্তন করে ‘নেতাজি এক্সপ্রেস’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় রেল। ২০ জানুয়ারি কালকা মেলের এই নামকরণের কথা টুইট করে জানান রেলমন্ত্রী পীযূশ গয়াল। সেখানে বলা হয়েছে, ১২৩১১/১২৩১২ হাওড়া-কালকা এক্সপ্রেসের নাম নেতাজি এক্সপ্রেস করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পূর্বে বাণিজ্যিকভাবে চালানো ট্রেনগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল কালকা মেল। কলকাতার সঙ্গে কালকার যোগসূত্র ছিল এই ট্রেন। ১৯৪১ সালে কলকাতার বাড়ি থেকে ব্রিটিশের নজরবন্দি এড়িয়ে পালানোর সময় বিহারের গোমো থেকে কালকা মেলে চেপেছিলেন নেতাজি। সেই সময়ে গোমো স্টেশনটি বিহারের অধীনে ছিন, যা বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে রয়েছে।
একইসঙ্গে দেশের সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে অনলাইন বক্তৃতা, ওয়েবিনার, অঙ্কন প্রতিযোগিতা, ভার্চুয়াল পোস্টার তৈরি, সাইক্যাথন, যোগাথন এইসব ক্রীড়া কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(UGC)। অধ্যক্ষ ও উপাচার্যদের চিঠি দিয়ে UGC জানিয়েছে, নেতাজির কাজ, আত্মত্যাগ ইত্যাদি স্মরণ করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যেন এক বছর ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে। কোভিড বিধি মেনেই তা যেন করা হয়। এরইমধ্যে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। সেখানে ছাত্রছাত্রীরা মন্ত্রকের টুইটার ও ফেসবুক পেজে নেতাজিকে নিয়ে তৈরি ভিডিয়ো শেয়ার করতে পারবে।
নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিনটিকে রাজ্যের পক্ষ থেকে দেশনায়ক দিবস হিসাবে পালন করে বছরভর উৎসব উদযাপনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে রাজারহাটে আজাদ হিন্দ ফৌজের নামে স্মৃতিসৌধ তৈরি হবে। নেতাজির নামে তৈরি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়, যার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার রাজ্য সরকার বহন করবে।বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে দ্রুত গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে রাজ্য সরকার।

এক নজরে নেতাজি:

Advertisement

  • ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি, ওড়িশা রাজ্যের কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রবাসী বাঙালি, বিশিষ্ট আইনজীবী জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবীর নবম সন্তান সুভাষ।
  • পৈতৃক নিবাস ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কোদালিয়ায় (যা বর্তমানে সুভাষগ্রাম-এর অন্তর্ভূক্ত)।
  • ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কলকাতা থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে অনার্স-সহ বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর সুভাষচন্দ্র কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজউইলিয়াম হলে উচ্চশিক্ষালাভের জন্য ভর্তি হন।সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাতেও সফল হন। কিন্তু বিপ্লবী মনোভাবাপন্ন হ‌ওয়ায় সেই নিয়োগ অবলীলায় প্রত্যাখ্যান করেন।
  • সুভাষচন্দ্র ‘স্বরাজ’ নামক সংবাদপত্রে লেখালেখি শুরু করেন এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচারের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন বাংলায় মহান জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ।
  • ১৯২১ সালে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরে সুভাষচন্দ্রর প্রথম উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি ছিল ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’-এর ভারত সফর বয়কট করার আন্দোলন গড়ে তোলা।
  • চৌরি-চৌরার ঘটনায় গান্ধীজি তাঁর অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় হতাশ সুভাষচন্দ্র নবগঠিত স্বরাজ পার্টিতে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯২৭ সালে কংগ্রেসে আবার ফিরে আসেন সুভাষ। ১৯২৮ সালে ‘অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রস’-এর সভাপতি নিযুক্ত হন তিনি।
  • সুভাষ চন্দ্র তাঁর ২০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মোট ১১ বার গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাঁকে ভারত ও রেঙ্গুনের বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছিল। ১৯৩৩ সালে তাঁকে ইউরোপে নির্বাসিত করা হয়।
  • ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এমিলি শেঙ্কল-এর সঙ্গে পরিচিত হন ভিয়েনাতে। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁরা ব্যাড গ্যাস্টিনে বিয়ে করেন। তাঁদের এক কন্যাসন্তান অনিতা বসু পাফ। তিনি পেশায় অর্থনীতিবিদ, তাঁর স্বামী মার্টিন পাফ জার্মান পার্লামেন্টের প্রাক্তন সদস্য।
  • ১৯৩৮ সালে নেতাজি ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দ্বিতীয় বারের জন্য ত্রিপুরা অধিবেশনে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।
  • কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ ক’রে তিনি অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেছিলেন। ১৯৩৮ সালে তিনি জাতীয় পরিকল্পনা পরিষদের প্রস্তাবনা দেন। ফরোয়ার্ড ব্লকের নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল।
  • ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি) গড়ে উঠেছিল জাতীয়তাবাদী নেতা রাসবিহারী বসুর হাতে। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে রাসবিহারী বসু এই সেনাবাহিনীর দায়িত্ব সুভাষ চন্দ্র বসুকে হস্তান্তর করেন। একটি আলাদা নারী বাহিনী (রানি লক্ষ্মীবাঈ কমব্যাট) সহ এতে মোট ৮৫,০০০ সৈন্য ছিল।
  • সুভাষচন্দ্র বসুর বিখ্যাত উক্তি হল, “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”। তাঁর আর একটি বিখ্যাত উক্তি হল ‘ভারতের জয়’ অর্থাৎ ‘জয় হিন্দ’, যা পরবর্তীকালে ভারত সরকার গ্রহণ করে নেয়।
  • অন্তর্ধান না মৃত্যু: বিষয়টি আজও বিতর্ক উসকে দেয়। বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু না কি নেতাজির অন্তর্ধান হয়েছিল তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ৭৪ বছর পেরিয়ে আজও রহস্যে আবৃত রয়েছেন নেতাজি।১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর খবর ছাপা হয়েছিল জাপানের সংবাদপত্রগুলিতে। তবে এর যথেষ্ট বিরোধিতা আছে। কারণ বর্তমানে রেনকোজি মন্দিরে রাখা নেতাজির চিতাভষ্ম পরীক্ষা করে দাবি, ওই চিতাভস্ম নেতাজির নয়। বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষের মৃত্যুর সত্যতা যাচাই করতে একাধিক তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে। যার মধ্যে শাহনওয়াজ কমিশন, খোসলা কমিশন এবং মুখার্জি কমিশন উল্লেখযোগ্য।  

 

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল  ক্লিক করুন

 

Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
jibikadishari.co.in
Privacy & Terms of Use:
jibikadishari.co.in
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
26.04.2024 - 05:15:17
Privacy-Data & cookie usage: