টেলিভিশনের দিনে

1009
0

বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে-সঙ্গে এসেছে টেলিভিশন। প্রথম যেদিন এই টেলিভিশন মানব সমাজে প্রবেশ করেছিল সেদিন বিশ্বের মানুষ বিস্ময়ে দু চোখ মেলে দেখেছিল বিজ্ঞানের এই অবদানকে। ইথার তরঙ্গের সেই ক্যাথোড রশ্মির টেলিভিশন সেদিন ছিল সাদা কালোর। আজ এলইডি বা আরও আধুনিক রঙিন। বিশ্বের অন্যতম বহুলব্যবহৃত বা প্রয়োজনীয় সামগ্রী আজ এই টেলিভিশন। এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহের তত্ত্বতালাশ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জীবন-জীবিকা সংস্কৃতি বিনোদন উৎসব সবই আমরা টেলিভিশনের মাধ্যমে দেখতে পাই। এক কথায়, বিনোদন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ঘটে চলা যুদ্ধ, খেলা, মন্বন্তর রাজনীতি, মহাকাশের খবর থেকে সমুদ্রের তলদেশের জীবন্ত কাহিনি।
এই টেলিভিশনের সঙ্গে গোটা বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ নানা ভাবে যুক্ত। কেউ সংবাদ পরিবেশনের সঙ্গে, কেউ বিনোদন জগতের খবরাখবর তুলে ধরার কাজে, কেউ আরও নানা কারিগরি-অকারিগরি কাজে। বর্তমানে মোবাইলেও ঢুকে পড়েছে টেলিভিশন। এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সর্বপ্রধান মাস মিডিয়া। বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে। রাষ্ট্রসংঘের একটি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১.৬৩ বিলিয়ন মানুষ টিভির সামনে সময় কাটান দিনের কোনো-না-কোনো সময়। সেই সংখ্যা খুব শীঘ্রই গিয়ে দাঁড়াবে ১.৭৪ বিলিয়ন অর্থাৎ ১৭৪ কোটিতে। এ দেশে এই মুহূর্তে প্রায় ২৯৮ মিলিয়ন অর্থাৎ ২৯৮০ লক্ষ পরিবার টেলিভিশনের সামনে বসে খেলা, সিনেমা, খবর, যুদ্ধ, মহাকাশ থেকে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত সব বিষয় দেখে। ১৯৭ মিলিয়নের নিজস্ব টিভি রয়েছে। এ সবই রাষ্ট্র সংঘের দেওয়া সাম্প্রতিক তথ্য।
পৃথিবীতে কোথায় কখন কী ঘটে চলেছে তা আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই টেলিভিশনের মাধ্যমেই। বিশেষ করে এই শতকের সব থেকে বড় ঘটনা করোনা মহামারীতে অবরুদ্ধ মানুষ গোটা বিশ্বের ভয়াবহতা দেখেছে ঘরে বসেই।
এই টেলিভশনের গুরুত্ব ও প্রসারের জন্যই রাষ্ট্রসংঘ ১৯৯৬ সালে ১৭ ডিসেম্বর ঘোষণা করে ওয়ার্ল্ড টেলিভিশন ডে-র কথা। ১৯৯৬ সালের ২৬ নভেম্বর বসেছিল প্রথম বিশ্ব টেলিভিশন ফোরাম। সেই থেকে প্রতি বছর ২১ নভেম্বর ওয়ার্ল্ড টিভি ডে পালিত হচ্ছে।
টেলিভিশনের একটা বিস্তৃত ইতিহাস আছে। সংক্ষেপে বলা যায়, ১৯২৭ সালে ফ্রান্সের ২১ বছর বয়সী Philo Taylor Farsworts প্রথম এই যন্ত্রটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারপর বিশ্বের নানা প্রান্তে গবেষণা ও প্রযুক্তির বিবর্তনে এসেছে আজকের টেলিভিশন। এদেশে টেলিভিশন আসে ১৯৫০ সালে চেন্নাইয়ের এক ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের মাধ্যমে। ১৯৫৯ সালে দিল্লিতে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের পরীক্ষামূলক সম্প্রচার হয়। ১৯৬৫ সাল থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিওর একটি অংশ হিসেবে দিল্লিতে শুরু হয়েছিল দৈনন্দিন সম্প্রচার। ১৯৭২ সালে মুম্বই, অমৃতসর-এ শুরু হয়। ১৯৮২ সালে সারা দেশজুড়ে শুরু হয় জাতীয় টেলিভিশনের সম্প্রচার। আসে রঙিন টেলিভিশন। শুরু হয় প্রথম ধারাবাহিক ‘হমলোগ’। তারপর একে-একে রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি। এখন ঘরে-ঘরে টিভির রিমোট নিয়ে খেলাপ্রেমী-দিদা-নাতির মধ্যে কাড়াকাড়ির কথাও জানা যায়। জনপ্রিয়তা এমনই পর্যায়ে।
এই টেলিভিশন কথাটি এসেছে গ্রিক এবং ল্যাটিন ভাষার সংযোগে। প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘টেলি’ মানে দূর এবং ‘ল্যাটিন’ ভিজিও মানে দেখা।
টিভির দুটো দিকই আছে। ভালো এবং খারাপ। টিভির প্রচারিত খবর জনসমাজে ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে। শিশুরাও অনেক সময় নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারই ফলে অনেক দুঃসংবাদও আমরা শুনতে বা দেখতে পাই। আবার দেখতে পাই মহাকাশের নতুন গ্রহে মানুষের পদার্পণ। এক কথায়, টিভি বর্তমান বিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। আর বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন চ্যানেল এবং তার পরিবেশনার রেষারেষিই প্রমাণ দেয় বর্তমান যু্গে টিভির গ্রহণযোগ্যতা। এখন টিভিতে অনেক শিক্ষণীয় ক্লাসও নেওয়া হয়ে থাকে।

 

ভাস্কর ভট্টাচার্য