অশোক চক্রবর্তী
পরীক্ষাকক্ষে যেমন, পরীক্ষার প্রস্তুতির শুরু থেকেও সময়ের ব্যবহার বা সময় বিভাজন কীরকম কীভাবে করা যায় তা নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে, যেমন পোস্টম্যান/মেলগার্ড নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রস্তুতি পরামর্শে (https://jibikadishari.co.in/?p=5799, https://jibikadishari.co.in/?p=5825, ও https://jibikadishari.co.in/?p=6083)।
লিখিত পরীক্ষার পরের ধাপ অর্থাৎ ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা বা ইন্টারভিউয়েও একটা বড় প্রশ্ন, সময়ের ব্যবহার নিয়ে। আপনি স্কুল/কলেজের পরীক্ষা পাশ করার পর থেকে এই দীর্ঘ সময়টা কী করেছেন? যদি দেখা যায় আপনি যে কোর্স বা উচ্চশিক্ষার জন্য এখন আবেদন করেছেন তার অনুকূল কাজেই ব্যবহার করেছেন ওই সময়টাকে, তাহলে খুশি হবেন প্রশ্নকর্তা। আপনার একাগ্রতা, প্রস্তুতি, পরিশ্রম ও লক্ষ্যমুখী অখণ্ডতা তাঁদের আগ্রহ বাড়াবে।
হয়তো প্রশ্ন হবে, আপনি অবসর সময়ে কী করেন?
এমন প্রশ্ন মানেই যে আপনি এই ‘অনুকূল’ কাজ করেন কিনা জানতে চাওয়া তা নয়। আপনি সময়-সুযোগ পেলেই বা সময়-সুযোগ তৈরি করে বিশেষ কিছু খুব যত্নে, পরিশ্রমে, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে করেন, অনেক দূর এগনোর জন্য। প্রশ্নকর্তা এদিকটাও দেখতে চান— যত্ন, পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা আপনার মধ্যে কীরকম কতটা গভীর হতে পারে অর্থাৎ এসব ব্যাপারে আপনার ওপর কতটা নির্ভর করা যাবে। এই গুণ ও দক্ষতাগুলো যাঁর আছে তিনি চাকরিতে উন্নতি বা প্রিয় কোর্সের জন্যও সেগুলির প্রয়োগ করবেন এমনটাই প্রত্যাশিত।
এই দিকগুলো জানার জন্য হয়তো প্রশ্ন হল, আপনার হবি কী? আপনি হয়তো বললেন সিনেমা দেখা। প্রশ্ন: একটা প্রিয় সিনেমার নাম বলুন অথবা, আপনি শেষ কোন সিনেমাটা দেখেছেন। উত্তর হয়তো, চাঁদের পাহাড়। প্রশ্ন: কার লেখা? উত্তর: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন: ওই লেখকের আরেকটা সিনেমা হওয়া বিখ্যাত বইয়ের নাম করুন। উত্তর হয়তো বললেন, পথের পাঁচালি। প্রশ্ন: তার পরিচালক কে? উত্তর: সত্যজিৎ রায়। প্রশ্ন: তাঁর বাবা-ঠাকুরদাও বিখ্যাত। কেন? ……… এভাবে আপনার উত্তরের রেশ ধরেই পরের প্রশ্ন হবে বা হবে না— ভিন্ন কোনো প্রসঙ্গের প্রশ্ন এনে সেই প্রশ্নোত্তরের শৃঙ্খলসূত্রে আপনাকে জানাবোঝার চেষ্টা হবে। জানা যাবে আপনি যা ভালোবাসেন তার জন্য আপনার আগ্রহ, নিষ্ঠা, কৌতূহল, স্মৃতিশক্তি, কর্মদক্ষতা, গুছিয়ে রাখার ক্ষমতা ইত্যাদি কত গভীর। আপনি তার জন্য কতদূর যান, কত ভাবেন, কত স্বপ্ন দেখেন। আশা করা হবে, আপনি চাকরির জন্য নির্বাচিত হলে কর্মজীবনেও সেই স্বভাব-প্রবণতার সুফল পাওয়া যাবে।
তাই যোগ্যতার প্রশ্নে হবি একটা বড় দিকনির্ণায়ক। হবি বলে অ-গভীর ভাবে জানা কিছুর উল্লেখ করবেন না। সাধারণভাবে ভালোলাগা এক জিনিস আর ভালোবাসা আরেক। সেই জিনিসই আপনার সত্যিকারের হবিপদবাচ্য হতে পারে যাকে আপনি তন্ন-তন্ন করে জানতে চান। তেমন নিষ্ঠা কি আপনার কিছুতেই নেই? খুঁজলে পাবেন না কেন?
তার মানে এই নয় যে, সময়কে আপনি কীভাবে ব্যবহার করেন সেবিষয়ে কিছু ভালো-ভালো বক্তব্য রপ্ত করে রাখলে কেল্লা ফতে। অতিচালাকি করে তাঁদের কাছে পার পাওয়ার আশা করবেন না, আছে ওপরে বলা প্রশ্নোত্তর-শৃঙ্খলের ছাঁকনি। সফল হতে হলে তৈরি হতে হবে প্রাত্যহিক জীবনচর্যায়, সময়ের সদর্থক লক্ষ্যমুখী ব্যবহারে, হবির মধ্যে বিষয়ের প্রতি ভালোবাসার গভীরতায়। এগুলোর নিদর্শন গড়ে তুলতে হবে।
তার মানে এও নয় যে, সমাজ-সংসার-জীবনের আর সব ভুলে পেশার জন্যই সব উৎসর্গ করতে হবে। সেরকম মানুষও আছেন, তাঁদের কথা আলাদা। সবাই সেরকম নন। সাধারণক্ষেত্রে ধরেই নেওয়া হয় সমাজ-সংসার নিয়ে থাকা মানুষ, তাঁদেরও স্বাদ-আহ্লাদ আছে। কিন্তু কাজের সঙ্গে আপোস কখনওই নয়। সেরকম সম্ভাবনা আছে কিনা সেটা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
কাজ পেয়ে গেলেও উন্নতির জন্য প্রশ্নটা থেকেই যায়: কাজের সময়, অবসর সময় আপনি কতটা পান, কীভাবে কাটান। কাজের মধ্যে দিয়েই আপনি আরও বড় হতে চান, নাকি লক্ষ্য ছিল কাজটা পাওয়া, পাওয়া হয়ে গেছে, নিশ্চিন্ত। নিজেই একজায়গায় থেমে থাকতে চাইলে সংস্থা কীভাবে আপনার মাধ্যমে বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বয় আশা করবে? কাজের মধ্যে দিয়ে বড় হওয়া, আরও নির্ভরযোগ্য হওয়া মানে নিজেরই যোগ্যতা, দরকষাকষির ক্ষমতা ক্রমাগত বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ, যা কাজ বজায় থাকলেই পাওয়া যায়, কাজে একজায়গায় থেমে থাকলে বা কাজ হারালে নয়। অনেকে দেখবেন, একের পর এক চাকরি বদল করে ক্রমশ আরও উচ্চতর অবস্থানে, বেতনমানে পৌঁছোন। আসলে তাঁদের সিভি ক্রমশ সমৃদ্ধতর হতে থাকে সময়কে সফলভাবে ব্যবহার করার নজিরে। সময় এগিয়ে যায়, বয়স বেড়ে যায়, সুযোগ ব্যবহৃত বা নষ্ট হয়। সময়ের অদৃশ্য মূল্যায়নকে ভুললে চলবে না।