শেষ হাসি হাসলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৩২ বছর পরে ইতিহাসের পুনরাবৃত্ত ঘটালেন তিনি। US Election Result 2024
পরাজিত হয়েও ফিরে আসা। মার্কিনিরা আগামী চার বছরের জন্য নতুন নেতা পেয়ে গেছেন। বর্ষীয়ান ডোনাল্ড ট্রাম্পেই আস্থা রাখল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা
প্রতিদ্বন্দ্বী ৬১ বছর বয়সি ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসকে ভোট গণনায় পেছনে ফেলে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে গল্পের শেষ নেই।
কেউ কেউ ট্রাম্পকে ক্ষ্যাপাটে বলেন। সুইং স্টেটস, ইলেকট্রোরাল কলেজ প্রভৃতি শব্দগুলি ভেসে বেড়াচ্ছিল। এই শব্দই ভোটের জয়ের রেজাল্টের বার্তা। সব জায়াগাতেই এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প।
২০২০ সালে হেরেও হার মানতে অস্বীকার করেছিলেন। তবে সেখান থেকে ফিরে এসে ফের একবার হোয়াইট হাউজ দখলে রাখলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এর আগে এভাবে শুধুমাত্র একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ৪ বছর পরে ফের হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা হয়েছিলেন।
গত নির্বাচনে হারার পরও ফের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন ট্রাম্প। সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমনটা দেখা যায়নি।
শেষবারের মতো রিচার্ড নিক্সন এমনটা করেছিলেন। তবে লাগাতার তিনটি নির্বাচনে লড়াই করে প্রথম এবং তৃতীয় দফায় জেতা দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এর আগে এই কীর্তি শেষ এবং শুধুমাত্র একবার হয়েছিল ১৮৯২ সালে।
হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভঃ উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাচনের পাশাপাশি ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে হাউস অব রিপ্রেসেনটেটিভের ৩৩ জন সিনেটরের।
এই ৩৩ জন সিনেটরের ওপর নির্ভর করবে হাউসে পাল্লা ভারী হবে কার দিকে রিপাবলিকান না ডেমোক্র্যাটদের।
এর উত্তর মিলেছে। রিপাবলিকানেই আস্থা রেখেছে আমেরিকাবাসী ভোটার।
প্রাথমিক ভোট গণনার পর একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সিনেট এবং কংগ্রেস দুই জায়গাতেই রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের থেকে অনেকটা এগিয়ে জয় পেয়েছে।
সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২। রিপাবলিকানদের সংখ্যা সেখানে ৫১। হাউসে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যা ১৬৩। রিপাবলিকান ১৮৭।
রূপান্তরকামী সেনেটরঃ এখানেই বলার, এই নির্বাচনে বে ডেলাওয়্যার রাজ্য থেকে বিপুল ভোট জয়ী হয়ে কংগ্রেসের সদস্য হচ্ছেন প্রথম রূপান্তরকামী ব্যক্তি সারাহ।
রাজ্যবাসীকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বস্তুত, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে রূপান্তরকামীদের সরাসরি আক্রমণ করেছিলেন।
তারপরেও তার এই জয় নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
সিনেটে নির্বাচনের পদ্ধতিঃ প্রতি দুবছরে হাউসের মেম্বাররা নির্বাচিত হন। ২০২২ সালে শেষ মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়েছিল। সে সময় হাউসে ডেমোক্র্যাটেরা রিপাবলিকানদের থেকে সংখ্যায় সামান্য বেশি ছিলেন।
মার্কিন সেনেটে প্রতিটি রাজ্য থেকে দুই জন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। রাজ্যের আয়তন যত বড় বা ছোটই হোক না কেন!
১০০ জন সিনেটর ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন।
তবে এই সিনেটরদের মধ্যে আবার তিন রকমের ভাগ থাকে। এক-তৃতীয়াংশ সিনেটরকে দুই বছর পর পর নির্বাচনে লড়তে হয়।
এ বছর যারা ভোটে লড়ছেন, তারা প্রথম শ্রেণির সেনেটর।
২০১৮ সালে ট্রাম্পের রাজত্বে তারা নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে এই ৩৩ জন সেনেটরেরও নির্বাচন হচ্ছে।
মার্কিন সংবিধানে সেনেট এবং হাউসের নির্বাচনে এই বৈচিত্র রাখা হয়েছে একটাই কারণে, ক্ষমতা যাতে কেন্দ্রিভূত না হয়।
বিরোধীদের শক্তিও যাতে অটুট থাকে হাউসে। বিভিন্ন সময় ছোট ছোট করে এই নির্বাচনগুলি হওয়ার ফলে প্রেসিডেন্ট একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করতে পারেন না।
অনেক সময়েই দেখা যায়, যে দলের প্রেসিডেন্ট তার বিপক্ষ দলের প্রতিনিধিদের সংখ্যা কংগ্রেসে বেশি।
আবার সেনেট এবং কংগ্রেসের মধ্যেও এই বৈচিত্র দেখা যায়। ফলে কোনো সিদ্ধান্তই এক তরফা নেওয়া যায় না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত চার বছরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একাধিকবার অস্ত্র আইন সংস্কারের চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু হাউসের বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত তা তিনি করতে পারেননি। খেয়াল রাখতে হবে, হাউসে রিপাবলিকানদের প্রতিনিধিত্ব বেশি থাকার কারণেই এই সিদ্ধান্ত পাশ হয়নি। অতীতে এমন আরও অসংখ্য উদাহরণ আছে।
ইতোমধ্যে ২৪৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে জয়ের অনেকটা কাছাকাছি পৌছে গেছেন ট্রাম্প। বিপরীতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ২১৪ ভোট।
ফৌজদারি অপরাধী হয়েও হোয়াইট হাউজে বসে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প রেকর্ড গড়লেন। তিনি পেয়েছেন ২৪৭ ইলেকটোরাল ভোট।
অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২১৪ ভোট। কমলা পেয়েছেন ৪৭.৪ শতাংশ ভোট এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৫১.২ শতাংশ ভোট।
ফিরে দেখাঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেলিস্ট যুগের শুরুটা ছিল ১৭৮৮ সালে। ১৮০০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টির বিজয়ের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল ফেডারেলিস্ট যুগের।
যদিও ডেমোক্র্যাটিক-রিপাবলিকান পার্টি টানা ২৯ বছর তাদের রাজত্ব চালিয়ে বিদায় নেয় চিরতরে। তার পরপরই আসে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল ইউনিয়ন।
১৮৬৯ সালে মসনদে চড়ে রিপাবলিকান পার্টি। আর সেই শুরু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অদল-বদলের মার্কিন সংসার।
১৮৬৯ সালের ৪ মার্চ থেকে আজ ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত মার্কিন ইতিহাসে মোট ২৯ ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
বিতর্কিত ট্রাম্পঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম ‘বিতর্কিত’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন ইতিহাসে ট্রাম্পই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ।
রাজনীতিতে পা রাখার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন এক ব্যবসায়ী। তবে এর পাশাপাশি টিভির পর্দাতেও তাকে দেখা যেত নানান অনুষ্ঠানে।
এছাড়া নানান বিতর্কও তার সঙ্গী হয়েছে বার বার। ২০১৬ সালে পর্নস্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় মোট ৩৪টি অভিযোগের সবকটিতেই দোষী সাব্যস্ত হন ট্রাম্প।
এই আবহে ট্রাম্পই প্রথম ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট’, যিনি কি না ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন।
প্রথম মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনো ফৌজদারি মামলার বিচারে হাজির হয়ে লজ্জার ইতিহাস গড়েছিলেন ট্রাম্প।
আর সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েও ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছিলেন এই রিপাবলিকান।
আর এবার একটি নির্বাচনে হারের পর ফের ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৩২ বছরের পুরনো ইতিহাস ছুঁলেন ট্রাম্প।
তবে নিজের যৌন কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছিল নিউইয়র্কের আদালতে।
সেই মামলায় মোট ৩৪টি অভিযোগ ছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারের সময় পর্নস্টার স্টর্মির মুখ বন্ধ করতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল এই মামলা।
স্টর্মির দাবি, ২০০৬ সালে নেভেদায় সেলেব্রিটিদের একটি গলফ প্রতিযোগিতায় ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল।
এরপর ২০০৭ সালে একটি শো’তে অংশগ্রহণ করে লস অ্যাঞ্জেলসে বেভারলি হিলসে ট্রাম্পের সঙ্গে তার বাংলোয় দেখা করেছিলেন স্টর্মি।
এরপর ২০১১ সালে ইন টাচ ম্যাগাজিনে স্টর্মি দাবি করেন যে ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। সেই সংক্রান্ত একাধিক তথ্যও দিয়েছিলেন।
তিনি দাবি করেছিলেন যে ট্রাম্প তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় নিয়ে মুখ না খোলার জন্য স্টর্মিকে ১৩০,০০০ মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের আইনজীবী।
দুই মুসলিম নারীর জয়
ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত রাশিদা তালিব এবং সোমালি বংশোদ্ভূত ইলহান ওমর জয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হয়ে। এই ইলহান একজন শরণার্থী ছিলেন এক সময়। US Election Result 2024