নারীদের সমানাধিকারের লড়াই চলছে আজও

schedule
2021-03-08 | 13:17h
update
2021-03-08 | 13:17h
person
জীবিকা দিশারী
domain
জীবিকা দিশারী

মহম্মদ যখন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন করেন সেদিন প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন একজন নারী। তিনি বিবি খাদিজা। অনেকেই জানেন এই বিবি খাদিজা ছিলেন সে সময়ের একজন ব্যবসায়ী। অথচ আজও বিশ্বের অনেক জায়গাতেই শিক্ষা ধর্মের প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে।

এই শিক্ষা, কাজ সামাজিক নিরাপত্তা এবং সমানাধিকারের দাবিতেই সালে বিশ্ব দেখেছিল ক্লারা জেটকিন নামে এক সংগ্রামী নারীকে যাঁর নেতৃত্বে আমেরিকার রাজপথে হেঁটেছিলেন শত-শত নারী। কাপড় কলের শ্রমিক নারীরা মজুরির দাবিতে আমেরিকার রাজপথে হেঁটেছিলেন।`ব্রেড অ্যান্ড পিস’ স্লোগানের পাশাপাশি ছিল `সমকাজে সমবেতনের’ দাবি। ক্লারা জেটক্নিন ছিলেন বামপন্থী। সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তার দাবিতে নারীর এই পথ চলা।

১৯০৯ সালে আমেরিকায় প্রথম `ন্যাশনাল উইমেন’স ডে’ পালিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে একে-একে জার্মানির কোপেনহেগেন, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছডিড়য়ে পড়ে নারী অধিকারের বার্তা। ১৯৭৫ সাল ইউনাইটেড নেশনস ৮ মার্চ তারিখটিকে ইন্টারন্যাশনাল উইমেন’স ডে হিসাবে ঘোষণা করে। নারী তার পরিপূর্ণ অধিকারের সম্মান আদায়ে লড়াই চালিয়ে গেছে। তারই স্বীকৃতি হিসেবে পালিত হয়ে চলেছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিনটিকে স্মরণীয় করতে প্রতি বছর নানান ভাবনা বা স্লোগান তৈরি হয়। এ বছরের স্লোগান `ওম্যান ইন লিডারশিপ, অ্যাচিভিং অ্যান ইকুয়াল, ফিউচার ইন কোভিড-১৯। গত বছর থিম ছিল “অ্যান ইকুয়াল ওয়ার্ল্ড ইজ অ্যান এনাবেলড ওয়ার্ল্ড”। আই অ্যাম জেনারেশন ইকোয়ালিটি। রং ছিল পার্পেল। ২০১৯ সালের স্লোগান ছিল `ব্যালেন্স ফর বেটার’। এইসব স্লোগান থকেই স্পষ্ট হয় নারীদের সমানাধিকারের দাবিতে সব মহলই সচেষ্ট।

Advertisement

বাস্তব চিত্রটা একটু দেখা যাক।

ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন বা আইএলও এক রিপোর্টে জানাচ্ছে শহরে ও গ্রামে মেয়েরা প্রতিদিন ৩১২ ও ২৯১ মিনিট বিনা মাইনের গৃহস্থালির কাজে পরিশ্রম করেন। মেয়েদের এই সেবার কাজের কোনো স্বীকৃতিও আমাদের রাষ্ট্র বা সমাজ দেয় না। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ২০ শতাংশ। যদিও দেশের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য মন্ত্রিসভায় ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখতেই হবে, সেটা আমাদের সংবিধান স্বীকৃত।

করোনা মহামারী চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে নারীর অবস্থা আজও কত অসহায়। লকডাউনে যত কর্মী কাজ হারিয়েছেন তার অর্ধেকরও বেশি নারী। মহামারী আরও সঙ্কুচিত করেছে নারীশিক্ষার দরজা। স্কুল খুলেও নিউ নর্মাল দুনিয়ায় অনেক নারীরই আর স্কুলের মুখ দেখা হবে না। এইসব নানাবিধ হতাশার পাশাপাশি সবথেকে ভয়াবহ যে চিত্র আজও আমাদের সমাজকে কলঙ্কিত করে চলেছে তার নাম গার্হস্থ্য নির্যাতন। যার সংখ্যা দিন-দিন অতিমারীর পর্যায়ে। শুনলে অবাক হতে হয় লকডাউনের প্রথম ছয় মাসে গার্হস্থ্য নির্যাতনের সংখ্যা নাকি তিন কোটিরও বেশি।যা তথ্যে অন্তর্ভুক্ত।

অক্সফ্যাম নামক সংস্থার রিপোর্ট জানাচ্ছে, এই আধুনিক বিশ্বেও পরিবারের অনুমতি ব্যতিরেকে বাড়ির বাইরে পা দিলে ভারতবর্ষে ৫৪ শতাংশ নারীর কপালে জোটে মার। ৮৬ শতাংশকে শুনতে হয় গঞ্জনা এবং অপবাদ।

আজও বিশ্বে পুরু্ষের চেয়ে নারী ১৬ শতাংশ হারে পারিশ্রমিক কম পান। শুধু কি পারিশ্রমিক? ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ইত্যাদি বহু দেশ নারী নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, বধূ হত্যা, মেয়ে হয়ে জন্মানোর অপরাধে বা কন্যা সন্তান প্রসব করার অপরাধে পুড়িয়ে মারার অনথিভুক্ত হিসাবহীন মৃত্যু ঘটে চলেছে। এতসব নির্যাতন অসহায়তার চিত্রের মধ্যেও কিছুটা আলোর দিশা দেখাচ্ছে এই পৃথিবীরই বর্তমান একাংশ সফল নারী। তা সে খেলার দুনিয়াই হোক অন্যান্য ক্ষেত্রে।

তবু সব বাধা পেরিয়ে নারী আপ্রাণ লড়াই করে চলেছে জীবনে। একটা বড় হতাশার চিত্রের পাশেই নারীর এমন কিছু সাফল্য গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নারীরাই। এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় ২৩টা বেশি দেশে নারীর হাতেই চালিকা শক্তি। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের শেখ হাসিনা থেকে অ্যাঞ্জেলা মর্কেল সহ অসংখ্য নারী জয়ের টিকা পরে জগৎকে বার্তা দিচ্ছে নারীর জয়ের। অর্থনীতি রাজনীতির কোনো অংশেই তাঁরা পিছিয়ে নেই। এয়ার ফোর্স থেকে আদালত, যুদ্ধ বিমান থেকে গভীর সমুদ্রে নৌবাহিনী্র সেনা প্রধান এখন নারী। মহাকাশ গবেষণায়ও নারীর বিচরণ নতুন ঘটনা নয়। আর সব থেকে জলজ্যান্ত উদাহরণ মহামারীতে নারীর গোপন লড়াই। বিশ্বের ভ্যাকসিন তৈরির লড়াইয়ে শয়ে-শয়ে পুরুষের পাশাপশি এমন কিছু নারীর লড়াই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে সুযোগ পেলে নারী কতদূর প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারে।সমীক্ষায় প্রকাশ, দেশের ৩৫০টি বৃহৎ ব্যবসার কর্ণধার মহিলা। তথ্যপ্রযুক্তি থেকে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সমান দাবিদার হয়ে ওঠার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে নারী। যদিও এক হিসেব বলছে নারী-পুরষের সমতা আসতে নাকি এখনও বাকি ১৩০ বছর। বর্তমানে ৮৭টা দেশে কর্মরত নারী ৩.৫ শতাংশ।

Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
jibikadishari.co.in
Privacy & Terms of Use:
jibikadishari.co.in
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
20.04.2024 - 21:52:48
Privacy-Data & cookie usage: