“প্রাণকে নারী পূর্ণতা দেয়, এই জন্য নারী মৃত্যুকেও মহীয়ান করতে পারে ”
সৃষ্টির তো নির্দিষ্ট ক্ষণ হতে পারে না, স্বভাবতই নারীদের জন্য আবার নির্দিষ্ট দিন কি ? সে তো চিরন্তন। এরপরেও তাঁদের কৃষ্টি, শক্তি, লড়াই ও অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন বেছে নিতেই হয়। সে কারনেই ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চ দিনটিকে জাতিসংঘ ” আন্তর্জাতিক নারী দিবস ” হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।
নারীর সমানাধিকার প্রদানের জন্য লড়াই চলছে আজও। এই সমানাধিকারে সিলমোহর দিতে পারে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা এবং জীবিকার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতা। স্বনির্ভরতার জন্য দেশের সরকারকে যেমন এগিয়ে আসা প্রয়োজন, ঠিক ততটাই সরকারের কাজেও মহিলাদের অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে। লড়াইটা শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। ভারতীয় পার্লামেন্টে পেশ করা হয় ৩৩% আসন সংরক্ষণ বিল। রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেলেও, আইনসভায় তা আজও সমাধান হয়নি।
দেশের প্রশাসনিক মানচিত্রে নারীর অবস্থান কতটা? সেটা দেখা যাক। সারা দেশের মোট ৩০ লক্ষ ৮০ হাজার কর্মীর মধ্যে মাত্র ৩ লক্ষ ৩৭ হাজারের কাছাকাছি মহিলা সরকারি কাজে নিযুক্ত সরাসরি।শতাংশের হিসাবে মাত্র ১০%। এখনও অনেক পথ যেতে হবে নারীকে। অর্থাৎ সরকারি কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আকাশচুম্বী।
এটা নয় যে, সরকারি কর্মক্ষেত্রে নারী সমাজের যোগদান শুরু হয়েছে অনেক পরে। স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সালের ব্যাচেই ভারতের প্রথম মহিলা আইএএস হয়েছিলেন আন্না রাজম মালহোত্রা। ১৯৭২ সালে প্রথম মহিলা আইপিএস অফিসার হন কিরন বেদি। সরকারি ক্ষেত্রে মহিলাদের যোগদান বাড়ানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সরকারের পক্ষ থেকে। ১৮০ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি, ৭৩০ দিনের শিশু যত্নাদির জন্য ছুটি সহ ইউপিএসসি, এসএসসি পরীক্ষায় আবেদন ফি হ্রাস সহ একাধিক ব্যবস্থা। পাঞ্জাব, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্য সরকার নিজে থেকে সরকারি চাকরিতে ৩০% মহিলা আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করে ফেলেছে।
বেসরকারি বা অসংগঠিত ক্ষেত্রে যদিও মহিলাদের অংশগ্রহণের মাত্রা কিছুটা আশাব্যঞ্জক। পুরুষদের (৬৮.৪%) এর পাশাপাশি বর্তমানে মহিলারাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কর্মরত হচ্ছেন (৩১.৬%)। তা সত্ত্বেও কাজের নিশ্চয়তা, বেতন পরিকাঠামো এবং সামাজিক সুরক্ষার দিক থেকেও সরকারি ক্ষেত্রে নারীর কর্মসংস্থানের বৃদ্ধিই যে নারী সমাজকে আরও এগিয়ে চলার পথ দেখাবে, সমৃদ্ধশালী করবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বর্তমান এ রাজ্যেও দিন দিন নারী শিক্ষার প্রগতি ঘটে চলেছে। মেয়েরা লড়াই করে উঠে আসছে এবং নিজেদের শক্তি দিয়ে প্রমাণ করছে তারাও পারে। চারিদিকে তাকালে নারীর অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। ব্যাঙ্ক বিমা, রেল, পুলিশ আদালত থেকে শুরু করে বিজ্ঞানের পথেও নারীর এগিয়ে চলা। বর্তমানে এমন কোনও ক্ষেত্র নেই যেখানে নারীর পদার্পণ ঘটেনি। সরকারি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নারীর আরও বেশি এগিয়ে যেতে হবে। নারীকে জয় করে নিতে হবে তার অধিকার, ক্ষমতা।আগামীদিনে তাই শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে মহিলাদের পূর্ণ অংশগ্রহনই নারী দিবসের স্বার্থকতা বাড়িয়ে তুলবে এ বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
Women’s engagement in govt Job, Women’s Day