World Health Day : সুস্থতাই আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য

737
0
world health day
Courtesy: India TV

স্বাস্থ্য হল সম্পদ কারণ এটি মানুষের জন্য ঈশ্বরের সবচেয়ে মূল্যবান উপহারগুলির মধ্যে একটি।

কথায় আছে স্বাস্থ্যই সম্পদ। ১৮৬০ সালে আমেরিকান ফিলোজফার রালফ ওয়ালডো এমার্সনের করা `হেলথ ইজ ওয়েলথ’ এই প্রাচীন এবং প্রবাদসম বাক্যটির এক গভীর অর্থ রয়েছে। যদি তুমি নিজে সুস্থ থকো, তবেই তুমি জীবনের সব সুখ আনন্দও উপভোগ করতে পারবে। সাফল্য পেতে পারবে। এটি একটি বিশ্ববিখ্যাত প্রবাদ। এটি যে কত ধ্রব সত্য তা আজও জ্বল জ্বল করে। শিশু বয়স থেকেই এই শব্দের সঙ্গে পরিচিত হই আমরা সকলেই। এই বাক্যের মধ্য দিয়ে সমস্ত ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বোঝায়। যখন কেউ সুস্থ স্বাস্থ্য বজায় রাখে তখন সে সুখের চাবিকাঠি খুলে দেয়।

স্বাস্থ্য হল সম্পদ কারণ এটি মানুষের জন্য ঈশ্বরের সবচেয়ে মূল্যবান উপহারগুলির মধ্যে একটি। সুস্বাস্থ্য বলতে একজন ব্যক্তির সুষম এবং সুস্থ শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বোঝায়। কোনো ব্যক্তি সুস্থ না হলে সম্পদ, খ্যাতি ও ক্ষমতা কোনো আনন্দ আনতে পারে না। তাই বস্তুবাদী জিনিসের চেয়ে স্বাস্থ্যের মূল্য বেশি।

সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা করা, পরিমত আহার, জল পান ও ঘুম অত্যন্ত জরুরি। বলতে গেলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেকগুলি উপাদান রয়েছে, তার মধ্যে একটি বা দুটির ঘাটতি হলেই শারীরিক শক্তি আর বজায় থাকে না। স্বস্থ্যের হানি ঘটে। অনেক আগে স্বাস্থ্য বলতে মনে করা হত শুধু ভলোভাবে কাজ করার ক্ষমতা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থের সংজ্ঞা পালটেছে। সুস্থ থাকা মানে শুধু শারীরিক সুস্থতা নয়, সামগ্রিক অর্থে মানসিক এবং সমজিক স্থিতিশীলতাই সুস্বাস্থ্যের আসল সম্পদ। তাই বলা হয়, `কাম মাইন্ড ব্রিংস ইনার স্ট্রেন্থ অ্যান্ড সেল্ফ-কনফিডেন্স, সো দ্যাটস ভেরি ইমপরটেন্স ফর গুড হেলথ’।

এই সুস্থতা বজায় রাখতেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৪৮ সালে ৭ এপ্রিল দিনটিকে একটি স্বাস্থ্য সচেতনতা দিবস রূপে চিহ্নিত করে এবং `বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’ (World Health Day) হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। সুস্থ শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যই সুস্থ সমাজ গডে তুলতে সহায়ক। তাই মানবজীবনে এই দিনটির গুরুত্ব কোনো অংশেই খাটো নয়। তাই শুধুমাত্র এই দিনটিই নয়, জীবনের প্রতিটি দিনই সকল মানুষের নিজেদের স্বাস্থ্যর স্বার্থেই সজাগ ও সচেতন হয়ে ওঠা প্রয়োজন রয়েছে।

বর্তমান বিশ্বে দিন দিন পরিবেশগত ভাবে বিপুল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। যা মানুষের শারীরিক ও সামাজিক দিক থেকে নানা ব্যাধির কারণ হয়ে উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু মনে করে প্রতি বছর বিশ্ব জুডেড় প্রায় ১৩ মিলিয়ন মানুষ পরিহারযোগ্য পরিবেশগত কারণে প্রাণ হারায়। যার মধ্য রয়েছে অন্যতম, জলবয়ু সংকট। এই সংকট প্রতিটি মানুষের জীবনেই এক অশুভ পদধ্বনি। যা মানবতার সমনে এক ভয়ঙ্কর প্রশ্নচিহ্ন তুল দিয়েছে বর্তমান বিশ্বে। জলবায়ু সংকটও একটি বড় স্বাস্থ্য সংকট। জলবায়ুতে কার্বন এক ভয়ঙ্কর মৃত্যুর পদধ্বনি যেন। পরিবেশের এই `কার্বন’কে কমাতেই হবে। বিশ্বে বিজ্ঞানী থেকে পরিবেশবিদ সকলেই এ বিষয়ে বর্তমানে এক মত। গাছ লাগানো, পরিবেশ রক্ষা প্রভৃতি অনুশীলন করা জরুরি। যা আমাদের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এক সুস্থ সবল দিন উপহার দেবে। পরিবেশগত বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে মুক্তি দেবে। এখানেই বলার, মানবতার দিন দিন অগ্রগতি ঘটেছে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এসেছে ভ্যাকসিন এবং ঘটেছে চিকিতসর নানা উদ্ভাবন। এ সবই মানুষকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন দান করতে।

আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তগুলি জলবায়ু এবং স্বাস্থ্য সংকট ডেকে আনছে। জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ অস্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নেয়। বর্তমান বিশ্বের চেহারা দিন দিন বদলাচ্ছে। মশারা আগের চেয়ে অনেক বেশি এবং দ্রুত রোগ ছড়াচ্ছে। চরম আবহাওয়া, বজ্রপাত, এর মতো ঘটনা, জমির ক্ষয় এবং জলের অভাব মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে এবং তাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে। প্লাস্টিকের দূষণ আজ  গভীরতম মহাসাগরের গভীরেও। অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পানীয় দূষিত জল নানা রোগ ব্যাধি ডেকে আনছে। ক্যান্সার, হৃদরোগের মতো অসুখের বৃদ্ধি ঘটছে। বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন আজ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। যা আমাদের স্বাস্থ্যসচেতনার শৃঙ্খলকে ভেঙে দিচ্ছে। এর থেকে মু্ক্ত পেতে মানুষকেই সচেতন হতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতেই হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই উপলক্ষ্যে বেশ কয়েক বছর ধরেই এই দিনটিকে স্মরণ করে তুলতে বিভিন্ন সভা, আলোচনা থিম হিসেবে তুলে ধরে। এ বছরের থিম হল `আওয়ার প্ল্যানেট আওয়ার হেলথ’। প্যান্ডেমিক কালে ২০২১ এর থিম ছিল `বিল্ডিং এ ফেয়ারার, হেলদিয়ার এ ফেয়ারার’।

ভাস্কর ভট্টাচার্য