সুস্থ হৃদযন্ত্র মানেই সুস্থ জীবন। আজকের ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকতে গেলে সবেধন নীলমণি হৃদযন্ত্রটিকে ফিট রাখা ছাড়া উপায় নেই। আর এ ব্যাপারে জন সচেতনতা বাড়াতে ২০০০ সাল থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর দিনটিকে `ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে’ হিসেবে পালন করা হয় (World Heart Day)।
হার্ট সংক্রান্ত বিষয় তত্ত্বাবধান ও প্রচারের জন্য ১৯৭৮ সালে যৌথভাবে দ্য ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব কার্ডিওলজি ও দ্য ইন্টারন্যাশনাল কার্ডিওলজি ফেডারেশন মিলিতভাবে একটি সংস্থা তৈরি করে। পরে ১৯৯৮ সালে তার নাম হয় ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন।
১৯৯৬ সালে ইউনেসকো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন যৌথভাবে হার্টের সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জনচেতনা বাড়ানোর কাজ শুরু করে।
সেই উদ্যোগেরই ফলস্বরূপ ১৯৯৯ সাল থেকে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব জুড়ে বহু মানুষ হৃদরোগের সমস্যায় মারা যান।
হু-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত অসুখে প্রায় ১ কোটি ৭৩ লক্ষ মানুষ ফি বছর মারা যান। আর সেজন্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে হার্ট সংক্রান্ত বিষয়ে জনচেতনা বাড়ানোর কাজ করে থাকে।
হু-র হিসেব অনুযায়ী, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হাইপারটেনশন, জন্মগত হার্টের সমস্যা ইত্যাদি নানা কারণে বয়স হওয়ার অনেক আগেই মানুষ মারা যাচ্ছেন। এবং এরকম চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ ফি বছর প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে চিকিৎসকরা মূলত দায়ী করছেন তামাকজাত দ্রব্য, অ্যালকোহল, স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ইত্যাদিকে। তাঁদের মতে, এগুলিই মূলত হার্টের সমস্যার প্রধান অনুঘটক। এছাড়া হাই ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টেরল,
ডায়বেটিস এসবের সমস্যা থাকলে হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এই সব সমস্যার মোকাবিলা করা গেলে অন্তত ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আমরা যেখানে বসবাস বা কাজকর্ম ইত্যাদি করি সেই জায়গার পরিবেশ এমন হতে হবে যাতে হৃদসংক্রান্ত রোগের আশঙ্কা না বাড়ে।
পরিবেশ যদি অনুকূল না হয় তাহলে ব্যক্তির একক বাছবিচারের সুযোগ বেশি থাকে না। যেমন স্বাস্থ্যবর্ধক খাবার, ধোঁয়ামুক্ত এলাকা ইত্যাদি।
হার্টের সমস্যায় মূলত পুরুষরাই ভোগেন, কিছুদিন আগে পর্যন্ত এমনটাই মনে করা হত। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, এই মুহূর্তে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন মহিলা হার্টের অসুখে ভোগেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের হার্টের অসুখ প্রথমে ধরা পড়ে না।
আর সেজন্যই হার্টের অসুখে মহিলাদের মৃ্ত্যুর হার অনেক বেড়ে গিয়েছে। ভারতে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ নিয়মিত ধূমপান করেন এবং এঁদের মধ্যে বহু মানুষ আছেন যাঁরা জানেন না যে ধূমপানের ফলে তাঁদের হার্ট ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর থেকে বাঁচার উপায় বাতলে দিচ্ছেন চিকিৎসকরাই।
তাঁরা বলছেন: ধূমপান কম করুন, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় কম খান, পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান ফ্যাট রয়েছে এমন খাবার এড়িয়ে চলুন, খাদ্য তালিকায় সবজি ও ফলের পরিমাণ বাড়ান, খাবারে নুন ও চিনির ব্যবহার কমান, এবং সর্বোপরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে নিয়মিত চেক আপ করান।