Site icon জীবিকা দিশারী

সমুদ্র সচেতনতা দিবস

world oceans day

আমরা ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে যত জানি, বা আরও উপরে মহাকাশকে যত জানি, ততটা বোধহয় জানি না সমুদ্রতলদেশের রহস্যময়তাকে।

চাঁদের পৃষ্ঠ বা মঙ্গলগ্রহ নিয়ে আজ অনেক তথ্য বিজ্ঞানীরা আমাদের সামনে হাজির করছেন দিন দিন, আমরা বিস্মিত হচ্ছি।

গত কয়েক বছর ধরে পৃথিবীর উপরিতলের মতো সমুদ্রের গভীরের রহস্য ভেদ করতেও অবিরাম সন্ধান চালাচ্ছেন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের ২৪টি গবেষণা সংস্থা মিলে গঠিত হয়েছে ‘অ্যাটলাস’।

সমুদ্রতলের হাজার-হাজার ফুট নীচে কী রয়েছে? কত ধরনের জলজ উদ্ভিদ, কত বিচিত্র মাছ, কত বিচিত্র প্রবাল প্রাচীর রয়েছে লোনা জলের গভীরে।

শুনলে অবাক হয়ে যেত হয়, প্রতি বছর নাকি হাজার বিস্ময়কর প্রজাতির জলজ প্রাণীর সন্ধান মিলছে আধুনিক প্রযুক্তির ‘রোবোটিক’ সাবমেরিন বা সি গ্লাইডার-এর সাহায্যে জিপিএস পদ্ধতিতে।

সমুদ্রের ড্রাগন বা রাক্ষস মাছ যেমন আছে, তেমনই আছে সি হর্স। অনেকটাই ঘোড়ার আকৃতির এই মাছ, আবার মিলেছে এক ধরনের মাছ, যাকে নল মাছ বলে। তাদের প্রকৃতি নাকি অনেকটাই ক্যাঙারুর মতো।

বাচ্চাদের নিয়ে একসঙ্গে জলে ঘুরে বেড়ায়, বাচ্চারা ভয় পেলে মায়েদের পেটের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। এই মাছ হাঁ করে খেতে পারে না।

মুখের চোঙার আগায় একটা ফুটো থাকে সেই দিয়ে খাবার খায়। এমন হাজার-হাজার বিস্ময় আজও লুকিয়ে রয়েছে সমুদ্রের গভীরে।

পৃথিবীর ৭০.৯ শতাংশ জল, ২৯.১ শতাংশ স্থলভাগ। সপ্তসাগর দিয়ে ঘেরা আমাদের ভৌগোলিক সীমা। ভারতের তিন দিকেই সমুদ্র। আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, দক্ষিণ সাগর, আর্কটিক ওশেন।

ফুসফুস যদি মানুষের প্রাণরক্ষাকারী যন্ত্র তবে পৃথিবীর ফুসফুস হল এই সমুদ্র। সাগরমালাকে বলা হয়, মাদার অব হিউম্যান রেস।

অথচ এই সমুদ্রকেই মানব সমাজ কী নিদারুণ অবহেলায় দূষণ ঘটিয়ে চলেছে। সঙ্গে-সঙ্গে ডেকে আনছে মানব সভ্যতার জীবন ধারণের বিপদ। ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে চলেছে এই পৃথিবীর দূষণমাত্রা।

আকাশ জল মাটি থেকে সমুদ্রেও বিপদের সঙ্কেত। ক্রমশই বাড়ছে সমুদ্রজলের তাপমাত্রা। ফলে ঘন-ঘন ঝড় বৃষ্টি বন্যা। অন্যদিকে সমদ্র যেন মানুষের দূষণের ভাগাড় হয়ে উঠছে দিন-দিন।

বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন প্রতি বর্গ মাইলে ৫০ হাজার প্লাস্টিক বোতল ও হাজার-হাজার টন প্লাস্টিক গিয়ে জমা হচ্ছে এবং সমুদ্রের দূষণ ঘটিয়ে চলেছে মানুষ। তিমির পেটেও মিলছে প্লাস্টিক।

এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন কলকারখানার রাসায়নিক পদার্থ, যা প্রতিদিন সমুদ্রে মিশে দূষণ ঘটিয়ে চলেছে। অথচ মানুষের জীবনে সব থেকে বেশি জরুরি ছিল পরিবেশ সচেতনতায় সমুদ্র নামক ফুসফুসটির সুরক্ষার দিকটি দেখা। সমস্যা আজ খুবই গুরুতর।

এই ভয়াবহ সমস্যার দিকে প্রথম সজাগ র্বার্তা দিয়েছিলেন কানাডার একদল পরিবেশ বিজ্ঞানী। ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনেইরোতে পরিবেশ নিয়ে ধরিত্রী সম্মেলনে জোরালো ভাবে সোচ্চার হয়েছিলেন পরিবেশ সচেতনার পাশাপাশি সমুদ্রদূষণ রোধেও।

নানান ঘটনার পরম্পরায় ২০০৮ সালে জাতিসংঘ ৮ জুন দিনটিকে বিশ্ব সমুদ্র দিবস ঘোষণা করে। সুস্থ সমুদ্র, সুস্থ পৃথিবীর প্রতি পৃথিবীর মানুষকে সচেতনতার বার্তা দিতে। সমস্যা গভীর। গুরুতর অসুখ সারাতে মানুষকেই সচেতন হতে হবে।

ভাস্কর ভট্টাচার্য

Exit mobile version