বিশ্ব ডাক দিবস

schedule
2020-10-09 | 13:54h
update
2020-10-09 | 13:54h
person
জীবিকা দিশারী
domain
জীবিকা দিশারী

দেশ আছে কিন্তু সে দেশে ডাকবিভাগ বা পোস্ট অফিস নেই এমন কোনো দেশই বোধ হয় নেই। ডাক পরিষেবা যে-কোনো দেশের যে-কোনো মানুষের কাছে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক কথায়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক বিকাশে যে-কোনো দেশেই ডাক বিভাগের এক বিরাট ভূমিকা। এক সময় চিঠি আদান-প্রদান থেকে টাকা-পয়সা এক জায়গা থেকে এক জায়গায় লেনদেন করার মূল মাধ্যম ছিল পোস্ট অফিস। তার কর্মকাণ্ড তখনও ছিল বিপুল। মানুষকেও পার্সেল হিসাবে পাঠানোর কথা জানা যায় বিশেষত পুরোনো গল্পউপন্যাসে। যেমন বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসেও। আধুনিক বা ডিজিটাল যুগ আসার আগেও পুরোপুরি চিঠিপত্রের আদানপ্রদানের জন্য দূর প্রদেশে বসবাসকারী আত্মীয়পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগের মূল মাধ্যমই ছিল চিঠি। দেশে-বিদেশে, এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশে লক্ষ-লক্ষ চিঠি পরিবহনের কাজ করত বা করে ডাক বিভাগ। টরে-টক্কা বা ‘তার করা’  শব্দগুলোও খুব পুরনো হয়ে যায়নি একালের মানুষের কাছে। এক কথায়, ডাক বিভাগের ব্যাপ্তি ও কর্মকাণ্ড কোনো অংশেই ছোট নয়। নানা দেশে নানা ভাষায় তা পরিচিত হয়ে থাকে। ভারতবর্ষে যে-সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক কর্মী কাজ করেন তার মধ্যে পোস্ট অফিস হল অন্যতম কর্মক্ষেত্র।

ভারতবর্ষে প্রথম ডাকবিভাগ তৈরি হয়েছিল ১৭৭৪ সালে। পরবর্তী কালে বিশাল আকারে প্রধান জেনারেল পোস্ট অফিস বা জিপিও তৈরি হয় ১৮৬৪ সালে। আর উল্লেখ্য, বিশ্বের সব থেকে উঁচু স্থানে অবস্থিত (১৪,৪০০ ফুট) ডাকঘরটি রয়েছে ভারতের হিমাচল প্রদেশের হিকিমে।

বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ডাকবিভাগগুলির ভূমিকা স্মরণ করাতে সাধারণ মানুষের সচতেনতা বাড়াতে প্রতি বছর ৯ অক্টোবর দিনটিকে ওয়ার্ল্ড পোস্ট অফিস ডে পালন করা হয়ে থাকে। প্রথম ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন তৈরি হয়েছিল ১৮৭৪ সাল। সুইজারল্যান্ডে। ১৯৬৯ সালে টোকিওয় ইউনিভার্সাল পোস্টাল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সম্মেলনে প্রতি বছর পোস্ট অফিস ডে হিসেবে এই দিনটি পালনের কথা ঘোষণা করা হয়। ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন বা ইউপিইউ তৈরি হয়েছিল ১৯৪৮ সালে।

Advertisement

বিশ্বজুড়ে ডাক বিভাগের এক বিশাল ও বৈচিত্র্যময় ইতিহাস রয়েছে। খিস্টপূর্ব ২৫৫ সালে প্রথম ডাকটিকিটের প্রচলনের কথা জানা গিয়েছে। বিশ্বের প্রথম আঠালো ডাক টিকিট ছিল ‘দ্য পেনি ব্ল্যাক’। যা জনসাধারণের জন্য গ্রেট ব্রিটেনে চালু হয়েছিল ১৮৪০ সালে মে মাসে। ১৮৪০ সাল গ্রেট ব্রিটেন চিঠিতে স্ট্যাম্প ব্যবহার করেছিল পেনি ব্ল্যাকের। এই পেনি ব্ল্যাক ছিল তরুণ কুইন ভিক্টোরিয়ার প্রতিকৃতি। সেই দেখাদেখি ১৯৪২-এর আগস্ট মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সীমিত ডাক পরিষেবা চালু করে। তারপর তার বিস্তৃতি ঘটে ১৮৪৫ সালে। দু আনায় ১০০ মাইল অবধি চিঠি বিলি করা যেত।

দীর্ঘ কয়েক শো বছরের ডাক বিভাগের ইতিহাসে এক রোমাঞ্চকর কাহিনি হল প্রাচীন ঐতিহাসিক হেলানিকাসের তথ্য থেকে জানা যায়, প্রথম চিঠিটি যিনি লিখেছিলেন তিনি ছিলেন একজন মহিলা। ফার্সি রানি আটোসা।

আটোসা থেকে রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ পথ। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনে যত সাহিত্য রচনা করেছেন তার মধ্যে অন্যতম পত্র সাহিত্য। ‘ইউরোপ যাত্রীর ডায়েরি’, ‘ছিন্ন পত্র’ বা ‘রাশিয়ার চিঠি’র ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক মূল্য এক অর্থে মহামূল্যবান। পত্রসাহিত্যের প্রসঙ্গে বহু ঐতিহাসিক মানুষের চিঠির কথা আসে। তাঁদের মধ্যে একজন জওহরলাল নেহরু । তাঁর ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’ মেয়ে ইন্দিরাকে লেখা চিটিই যা পরে স্মরণীয় বই হয়ে উঠেছে। অবশ্যই আমাদের স্মরণে আসে কালিদাসের মেঘদূত থেকে শুরু করে অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্র স্মরণ করে পরবর্তীকালের ভিন্নধারার পত্রোপন্যাস বা এপিস্টোলারি নভেল-এর কথাও।

বর্তমান সময় ডিজিটালাইজেশনের যুগ। হাতে-কলমে চিঠির দিন ফুরিয়েছে। ‘যাও পাখি বলো তারে’র মতো এক সময়ের রানার-রানার ডাকহরকরা নির্ভরতাও পেরিয়ে এখন পুরোপুরি ইমেল-হোয়াটসয়্যাপ-মেসেঞ্জার জাতীয় পত্রবাহকের যুগ, ভিডিওকলের যুগ। আধুনিক সভ্যতা আমাদের অনেক কিছু যেমন উপহার দিয়েছে তেমনই অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে, তার একটি হল চিঠি লেখা। বহু অপেক্ষার পর দূর থেকে আসা প্রিয়জনের চিঠি হাতে পাবার অনুভূতি, গন্ধ, পথের পাঁচালির অপুর দুষ্টুমি বা নিজে না পড়তে পারলে উদ্বেগ-কৌতূহলের তাড়ায় অচেনা কাউকে দিয়েই পড়াতে ছোটা। এখন দূর প্রবাসে বসেই সব কথা মুখেই বলে নিতে পারা যায়। চাক্ষুষ লাইভ ছবি সহ। ডাকবিভাগের কাজও এখন আরও বহুমুখী, মূলত আর্থিক নানা পরিষেবার বিস্তারে।

তবু পোস্ট অফিসের গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। নতুন আঙ্গিকে বিশ্বের পোস্ট অফিস রূপায়িত হয়ে নতুন করে কাজ করে চলেছে। এই বিশ্ব অতিমারী বা মহামারীর সময়েও নিরলস কাজ করে গেছে পোস্ট অফিস। তাই তো এ বছর বিশ্ব পোস্ট অফিস দিবসের স্লোগান তৈরি হয়েছে ‘আমরা সর্বদা বিতরণ করেছি’। কোভিড মহামারীর সময়ে ওষুধ থেকে শিক্ষার উপাদান বিতরণ করেছে পোস্ট অফিস। অনেক কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন কিন্তু পোস্ট অভিস থেমে থাকেনি তাদের কর্ম পরায়ণতায়। আজ নানা আলোচনার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পোস্ট অফিস দিবস। ডাক টিকিট প্রকাশ, শিশুদের মধ্যে চিঠি লেখার অভ্যেস গড়ে তোলার জন্য এক সময় চিঠি লেখা প্রতিযেগিতারও আয়োজন করতেন পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ। হ্যাঁ, বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তি ও ঘটনার স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশও ডাকবিভাগের অনন্য অবদান। দেশ-বিদেশের ডাকটিকিট সংগ্রহের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে মূল্যবান দলিলতুল্য ফিলাটেলি বা ডাকটিকিট জমানোর পেশা ও প্রতিযোগিতা।

ভাস্কর ভাট্টচার্য

 

লাইভ টিভি দেখুন:   https://chetana.tv/

বাংলার প্রথম এডুকেশনাল চ্যানেল

Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
jibikadishari.co.in
Privacy & Terms of Use:
jibikadishari.co.in
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
22.04.2024 - 11:17:59
Privacy-Data & cookie usage: