মানুষের জীবনে শারীরিক–মানসিক উৎকর্ষতায় ঘুমের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে উইলিয়াম পেন বলেছিলেন `ট্রু সাইলেন্স ইজ দ্য রেস্ট অব দ্য মাইন্ড, অ্যান্ড ইট ইজ টু দ্য স্পিরিট হোয়াট স্লিপ ইজ টু দ্য বডি, নারিশমেন্ট অ্যান্ড রিফ্রেশমেন্ট’।
উইলিয়াম পেন ছিলেন লেখক, সমাজ-সংস্কারক ও উত্তর আমেপিরকার উপনিবেশ প্রতিষ্ঠাতা। যাঁকে নিয়ে প্রবাদ আছে পেনসিলভেনিয়া মানেই `পেনস উড’।
তিনি সেখানে সমস্ত গাছের নামকরণ করেছিলেন। আর এ সময়ের দলাই লামা বলেছেন, `স্লিপ ইজ দ্য বেস্ট মেডিটেশন।’
আজ ঘুম দিবসে মনে পড়ছে ঘুম নিয়ে নানাবিধ কথা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই বাংলোর ঘরে-ঘরে এক সময় ঘুম পাড়ানি ছড়া আজও শিশুদের ঘুমের বড় ওষুধ।
এখনও শোনা যায়, ছেলে ঘুমোল পাড়া জুড়োল বর্গি এল দেশে, বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে।‘ বিশ্বের ছড়াসাহিত্যে গল্প-গানে ঘুমের অজস্র রকমের কথা ছড়িয়ে আছে।
যে-কোনো মানুষেরই সঠিক মাত্রায় ঘুমের প্রয়োজন হয়। সঠিক মাত্রায় না ঘুমোলে ধীরে-ধীরে মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ শক্তি, পাচন ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
ঘুমের মধ্য দিয়ে শরীরে যে হরমোন নিষ্ক্রমণ হয় তা যে-কোনো স্বাস্থ্যের মানুষের কাছেই অত্যন্ত জরুরি। এক স্বাস্থ্যসমীক্ষায় জানিয়েছে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে যে-কোনো বয়সেরই মানুষ সঠিকভাবে কাজ করার ক্ষমতা হারায়, সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করে এবং অল্পেতে রেগে যায়, ডিপ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনার সঙ্গে-সঙ্গে তার সৃজনশীল কাজ করার শক্তিও সে হারায়।
এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে নিদ্রাহীনতার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়। জাপানে ক্ষতি হয় ১৩৮ বিলিয়ন, যুক্তরাজ্যে ৫০ বিলিয়ন, ও কানাডায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের কারণে সঠিক ভাবে কাজ না করার ফলে সারা বিশ্বেই কোটি-কোটি মুদ্রা কম বেশি ক্ষতি হয়। শুধু দেশের নয়, মানুষ নিজেই হারায় তার স্বাস্থ্য ও উৎকর্ষতা।
নষ্ট হয় দৈনন্দিন জীবনচর্যা। তাই প্রত্যেকেরই প্রয়োজন সঠিক পরিমাণে ঘুম। প্রতি রাতে সঠিক সময়ে ঘুমোতে যাওয়া মানুষরাই বেশি দিন সুস্থ থাকেন। তাঁদের কোনো ঘড়ির অ্যালার্ম দরকার হয় না।
মস্তিষ্ক সঠিক সময়ে সংকেত দেয়। রোজ নির্দিষ্ট সময় ঘুমোতে গেলে শরীরই একটা নিয়মে এসে ঘুমের সংকেত দেয়। একে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলে `সারকারডিয়ান রিদম’।
দিনের স্বল্প সময়ের ঘুমকে বলে `পাওয়ার ন্যাপ’। ঘুমের আবার নানান স্তার থাকে। চতুর্থ স্তরে গেলেই মানুষ ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে।
ঘুম স্বাস্থ্য ও মানসিক গঠন তৈরি করতে অত্যন্ত জরুরি। এই জরুরি বার্তা দিতেই ১৯৯৮ সালে এনএসএফ–এর (ন্যাশনাল পাবলিক এডুকেশন) জনগণের স্বাস্থ্য ও সুস্বাস্থ্যের বার্তা দিতে ১৯৯৮ সালে নিদ্রা সচেতনতার বার্তা দেওয়া শুরু করে।
আর সেই পথ ধরেই সুনিদ্রার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতেই ২০০৮ সাল থেকে ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাসোশিয়েশন অব স্লিপ মেডিশিন’ নিদ্রা দিবস পালন করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ওঠা ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটিও এই সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে চলেছে।
বিশ্ব ঘুম দিবস ঘুমের ওপর সচেতনা বাড়াতেই পালন করা হয়। তবে প্রতি বছরই যে ১৯ মার্চ পড়ে তা নয়। এই দিবসটিকে প্রতিবছর একটি স্লেগানে চিহ্নিত করা হয়।
এ বছরের স্লোগান `রেগুলার স্লিপ, হেলদি ফিউচার’। ২০১৯ এ ছিল `হেলদি স্লিপ, হেলদি এজিং’। ২০২০তে `বেটার স্লিপ, বেটার লাইফ বেটার প্ল্যানেট’।
একজন পূর্ণ বয়স্কের দিনে সাত ঘণ্টা ঘুমনো প্রয়োজন। শুধু পূর্ণবয়স্কদেরই নয় ছাত্রছাত্রীদেও সুস্থাস্থ্য বজায় রাখতে এবং মস্তিষ্ককে সঠিক ভাবে পড়াশোনায় চালনা করতে ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজন।
তা না হলে পড়াশোনার অত্যন্ত ক্ষতি হয়। সারাদিন ঘুম পায়, ক্নান্ত শরীরে মস্তিষ্ক সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। তাই ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই নিয়ম করে ঘু্মোতে যাওয়া উচিত।
কিন্তু বাস্তব জানাচ্ছে অন্যবার্তা। দিনের ২-৯ ঘণ্টা ছাত্রছাত্রীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। আর তার অধিকাংশই রাতের ঘুম কমিয়ে।
এর প্রতিফলন ঘটে তাদের পড়াশোনায়। বিজ্ঞানীরা তাই বার-বার সচেতন করছেন সঠিক ঘুমের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে।
অন্যদিকে দেখা যায়, বিশ্বের প্রায় ১৫ কোটি মানুষ পথে ঘুমোন। ভারতে ১,৭৭০.০০০ (প্রতি দশ হাজারে ১৫ জন ) মানুষ পথে ঘুমোন।
প্রতি বছর মহাবিষুবের আগে শুক্রবার এ দিনটি পালন করা হয়। এদিন সূর্য নিরক্ষরেখার উপরে থাকে এবং দিন ও রাত সমান দৈর্ঘ্যের হয়। এবছর চতুর্দশতম ঘুম দিবস।