জলাভূমি দিবস

2378
0

গত একশো বছরে আমাদের জলের ব্যবহার ছয়গুণ বেড়েছে, অন্যদিকে পৃথিবীর বুক থেকে অনেক বড় বড় জলাশয় বা জলাভূমি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

ভারতের পরিবেশ মন্ত্রকেরই তথ্য জানাচ্ছে, গত তিন দশকে ৩৫ শতাংশ জলাভূমি অদৃশ্য হয়ে গেছে।

উন্নত-অনুন্নত উভয় দেশই তাদের দেশের জীববৈচিত্র্যে সাযুজ্য রাখতে নানা নিয়মনীতি তৈরি করেছে। যা পরিবেশ নীতি হিসেবে পরিচিত।

জলবায়ু পরিবর্তন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, অপরিমিত নগরায়ণ, বিষাক্ত বর্জ্যপদার্থ নানাবিধ কারণে জলের ভূমির ভারসাম্য হারাচ্ছে ভয়াবহ ভাবে।

যে কোনো দেশের প্রধান জলাভূমিকে মনুষ্যদেহের কিডনির সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিডনি বিকল হলে যেমন মানবদেহ অচল হয়ে যায় তেমনই জলাভূমি ঠিকমতো সংরক্ষণ না হলে পরিবেশের ভারসাম্য শুধু নষ্ট হবে না, বিপর্যয় ডেকে আনবে।

জলাভূমি সংরক্ষণ কেন প্রয়োজন

  • জলাভূমি অসংখ্য মানুষের জীবিকার সন্ধান দেয়। তার মধ্যে মৎস্যচাষ একটি। বিশ্বের প্রায় ৩০ হাজার প্রজাতির মাছ মিষ্টজলে জন্মায়। জলজ উদ্ভিদ পরিবেশ ভারসাম্যে এক প্রধান ভূমিকা নিয়ে থাকে।
  • জলাভূমি বন্যা প্রশমনে, ঝড় প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
  • জলাভূমি সুরক্ষিত না হলে পৃথিবী বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
  • জলাভূমির সংরক্ষণ কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে সহায়তা করে।
  • জলাভূমি বিকল্প শক্তি হিসাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস।
এ ছাড়াও জলাভূমি বিভিন্ন দেশে বিনোদন, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে এক বিরাট ভূমিকা নিয়ে থাকে।

ভারতবর্ষে মিষ্টজল প্রায় ২.১ শতাংশ। তারমধ্যে ব্যবহারযোগ্য মাত্র ১ শতাংশ। ওয়েটল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল এনজিও-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সর্বাধিক জলাভূমি রয়েছে।

জলাভূমির সংখ্যায় এশিয়ায় জাপান ও চিনের পরেই ভারত। গত বছর রামসার ভারতের আরও দশটি জলাভূমিকে আন্তর্জাতিক বিচারে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত করেছে।

বর্তমান বিশ্বে ২৪০০ উল্লেখ্য জলাভূমি রয়েছে। সে সবের মোট আয়তন ২.৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। যা মেক্সিকো দেশের থেকে বড়।

দ্য প্যান্টানাল হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলাভূমি। যার আয়তন ৪২ একরেরও বেশি। এ ছাড়াও সুন্দরবন, রুদ্রসাগর, উলার হ্রদ, লোকটাক হ্রদ, কেওলাডিও ন্যাশনাল পার্ক উল্লেখযোগ্য।

প্রতি বছর জলাভূমি দিবসকে নানা স্লোগানে চিহ্নিত করা হয়। ২০২১ সালে ইউনেস্কোর নির্বাচিত স্লোগান `জলাভূমি ও জল’। গত বছর স্লোগান ছিল `জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য।’

জল নিয়ে বিপদ সংকেতে দিন-দিন বিশ্বের বড়-বড় দেশগুলিই নয়, ছোট দেশগুলিও চিন্তিত। প্রতি বছর এক শতাংশ করে নাকি জলের ব্যবহারযোগ্যতা বেড়েই চলেছে। তার উল্লেখযোগ্য কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন-নতুন নগরায়ণ।

আর এই কারণেই বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জলাশয়গুলিকে সংরক্ষণ ও তার রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে-সঙ্গে জীববৈচিত্র্যর পরিবেশকে টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই ১৯৭১ সালে বিশ্বের শতাধিক দেশ একত্রিত হয়ে ইরানের রামসার নামক জায়গায় গঠিত হয়েছিল `কনভেনশন অন ওয়েটল্যান্ডস’ নামক একটি চুক্তি। সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে প্রতি বছর ২ ফেব্রুয়ারি দিনটি পালিত হয়ে চলেছে `বিশ্ব জলাভূমি দিবস’।

ভাস্কর ভট্টাচার্য