অক্ষয় তৃতীয়া

1388
0
akshay-tritiya Picture

হিন্দু পঞ্জিকা মতে শুভ দিন হিসেবে যেগুলি চিহ্নিত তার মধ্যে অক্ষয় তৃতীয় অন্যতম। কারও-কারও কাছে ধনদৌলত ও সমৃদ্ধি কামনার দিন। পয়লা বৈশাখ যেমন বাঙালি জীবনের শুভ নববর্ষের সূচনা করে তেমনি অক্ষয় তৃতীয়া দিনটি অনেক ব্যবসায়ীর কাছে শুভ দিন। বিশেষ করে হিন্দু ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই দিনটির গুরুত্ব অনেক। অক্ষয় অর্থ যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। সংস্কৃত ভাষায় ‘অক্ষয়’ শব্দের অর্থ সমৃদ্ধি, প্রত্যাশা, আনন্দ, সাফল্য। কেউ-কেউ এই সমৃদ্ধির দিনটিকে বিশেষ ভাবে পালন করেন এবং ব্যবসার শুভ সূচনাও করেন। আধুনিক কালে এই তিথিতে সোনা বা রুপোর নানা অলঙ্কারাদি কেনার প্রচলন হয়েছে এবং স্বর্ণব্যবসায়ীরা পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন দিয়ে ফলাও করে সুখ ও সমৃদ্ধির নিদর্শন হিসাবে সোনা কেনার সৌভাগ্যপূর্ণ দিন হিসেবে তুলে ধরেন। মনে করা হয় দেওয়ালির মতো এই শুভ তিথিতেও রত্ন বা জিনিসপত্র কিনলে শুভ হয়। সেই কারণে বাঙালির নববর্ষের মতো প্রচুর মানুষ সোনার দোকানে ভিড় করেন বা কেনাকাটা করেন। এই তিথিতে ব্যবসায়ীরা তো বটেই অনেক গৃহস্থ পরিবারেও পুজো করা হয়ে থাকে। হিন্দু ক্যালেন্ডারে অক্ষয় তৃতীয়া হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া অর্থাৎ শুক্লপক্ষের তৃতীয়া। কথিত যে এই শুভ তিথিতে বেদব্যাস ও গণেশ উভয়ে মহাভারত রচনা আরম্ভ করেছিলেন। আরও কথিত যে এই দিনই সত্য যুগ শেষ হয়ে ত্রেতা যুগের সূচনা হয়। এই দিনে রাজা ভগীরথ গঙ্গাদেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন। এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য ও বৈভব দান করেন। এদিন কুবের প্রভূত অর্থ লাভ করেছিলেন বলে বৈভব-লক্ষ্ণীর পুজো করা হয়। বারো মাসে তেরো পার্বণের বাঙালি জীবনে তাই এইদিনটি সমৃদ্ধির দিন হিসেবে পালন করা হয়। এই পুজোর উপকরণ অন্যান্য পুজোর থেকে একটু ভিন্ন। অনেকের কাছেই অজানা। পঞ্জিকায় খুঁজলে বিস্তারিত জানা যাবে। উল্লেখ্য, এই তিথিতেই পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষে রথ নির্মাণ বা সংস্কার শুরু হয়। প্রাচীন রীতি অনুযায়ী এই দি্নে কোনো কাজ আরম্ভ করলে তা দীর্ঘায়ু বা দীর্ঘদিন অক্ষয় হয়ে থাকে। কেদার-বদ্রী-গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রীর যে মন্দির ছয় মাস বন্ধ থাকে, এই তিথিতে খোলার পরও দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।