রাজ্যের সর্বশিক্ষা মিশন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত দুই শিক্ষা বর্ষে (২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭) প্রায় ৮ লক্ষ পড়ুয়া প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে স্কুলেই ভর্তি হয়নি কিংবা স্কুলছুট হয়েছে। সম্প্রতি সর্বশিক্ষা মিশন যে তথ্য তুলে ধরেছে তাতে দেখা যাচ্ছে প্রাথমিক স্তরে তফশিলি জাতির পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলছুটের হার ১.৯৬ শতাংশ (২০১৫-২০১৬) থেকে বেড়ে হয়েছে ৩.৪১ শতাংশ।
রিপোর্টে প্রকাশ, যেখানে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে সংখ্যালঘু পরিবারের ২৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮০০ পড়ুয়া প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক বিভাগে ভর্তি হয়েছিল ঠিক তার পরের বছর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে এই দুই বিভাগে সেই সংখ্যা কমে দাঁডায় ২২ লক্ষ ৩৬ হাজার ৭৬৩। এই এক বছরে এক লাফে ছাত্রভর্তির হার কমে গেছে ২ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩৭। অন্যদিকে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিকে ১৬ লক্ষ ২৭ হাজার ৩২৪ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিল কিন্তু ২০১৬-১৭ শিক্ষাবছরে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ১০ লক্ষ ৩৩ হাজার ২১১। তথ্য বলছে, প্রায় ৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ১১৩ জন পড়ুয়া স্কুলছুট হয়েছে বা প্রাথমিক পাঠে ভর্তি হয়নি।
সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী সংখ্যালঘু অনগ্রসর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীই শুধু নয়, তপশিলি জাতি, আদিবাসী ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়ার দলছুটের সংখ্যাও এই দুই বছরে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে।
প্রাক-প্রাথমিকের মতোই প্রাথমিক স্তরেও ছাত্রভর্তির হার কমার চিত্র বেশ উৎকণ্ঠার। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সংখ্যা ৫৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ৮৫৮, সেখানে পরের শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সংখ্যা কমেছে ৩ লক্ষ ২৬ হাজার ৫৯২। পরের বছর সেই ছাত্রভর্তির সংখ্যা কমে দাঁডায়, ৫১ লক্ষ ৭ হাজার ২৬৬।
এই সব তথ্যের হিসাব অনুযায়ী গোটা দুটি শিক্ষাবর্ষে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি, তপশিলি জাতি ও আদিবাসী ক্ষেত্রেও প্রাথমিকপর্বেই একটা বড় অংশ শিক্ষার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বা নিতে বাধ্য হচ্ছে। কেন এই বিমুখতা তার কাটাছেঁড়া সব মহলেই। তার যে নির্যাস উঠে আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে সুসংহত পরিকাঠামোর অভাব, বেসরকারিকরণ, পরিকাঠামোগত ত্রুটির জন্য তো বটেই, যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ না থাকার কারণগুলিকেও তুলে ধরা হচ্ছে। একটা অংশের ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তি হওয়াও রয়েছে। রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা ভাতাপ্রাপক ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমার দিকটিও ইঙ্গিৎ করেছেন। তিনি বলেছেন, গত তিন বছরে সংখ্যালঘু ভাতাপ্রাপক ছাত্রছাত্রীও কমেছে অনেক। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২০০৮-০৯, ০৯-১০ ও ১০-১১ সালে শিক্ষাছুটের পরিসংখ্যান ছিল যথাক্রমে ৮.৬৬, ৬.৪৯, ৬.৬১।