ইউজিসির নেট (ন্যাশনাল এলিজিবিটি টেস্ট) পরীক্ষার জন্য অনলাইনে দরখাস্ত নেওয়া শুরু ৬ মার্চ ২০১৮ থেকে। পরীক্ষা পরিচালনা করবে সিবিএসই। এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপের জন্য আবেদন করার যোগ্যতা নির্ধারিত হয়। শুধুমাত্র অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদের জন্য কিংবা একই সঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপের জন্য এই পরীক্ষা দিতে পারেন। কিসের জন্য পরীক্ষা দিতে চান তা দরখাস্তে জানাতে হবে। প্রথম ক্ষেত্রে পরীক্ষায় সফল হলে শুধুমাত্র অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদের জন্য কোথাও আবেদন করতে পারবেন দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বা সম্পৃক্ত বিষয়ে গবেষণা বা পিএইচডি/এমফিলের সুযোগ পেলে ৩ বছরের জন্য ইউজিসির ফেলোশিপ পাবেন, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদের জন্যও তাঁরা আবেদন করতে পারবেন। লিখিত পরীক্ষা হবে ৮ জুলাই ২০১৮ তারিখে। আবেদন করতে হবে অনলাইনে, ৫ এপ্রিল ২০১৮ তারিখের মধ্যে।
নেট আবশ্যিক নয় কাদের: ২০০৯ সালের ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশন (মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড প্রসিডিওর ফর দ্য অ্যাওয়ার্ড অব দ্য পিএইচডি ডিগ্রি) রেগুলেশন অনুযায়ী যাঁরা পিএইচডি পেয়েছেন তাঁদের কোথাও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে আবেদনের জন্য নেট/ স্লেট/ সেট দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। যাঁরা ১৯৮৯-এর আগেই ইউজিসি / সিএসআইআর জেআরএফ পরীক্ষা পাশ করেছেন তাঁদেরও এই পরীক্ষা দেওয়ার দরকার নেই। যাঁরা ২০০২-এর ১ জুন-এর আগেই উজিসির অ্যাক্রেডিটেড সেট পরীক্ষায় সফল হয়েছেন তাঁরাও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের পদের জন্য সারা দেশের যে-কোনো জায়গায় আবেদন করতে পারেন নেট না দিয়েও। ওই তারিখের পরে সেট পাশ হলে শুধু সেই রাজ্যের কোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যাবে, অন্য রাজ্যে করতে হলে নেট সফল হতে হবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: ১) ইউজিসি অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান থেকে হিউম্যানিটিজ (ল্যাঙ্গুয়েজ সহ), সোশ্যাল সায়েন্স, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন, ইলেক্ট্রনিক সায়েন্স প্রভৃতি শাখায় অন্তত ৫৫ শতাংশ নম্বর সহ মাস্টার ডিগ্রি পাশ করে থাকতে হবে। কাছাকাছি ভগ্নাংশকে পুরো নম্বর ধরা যাবে না। ওবিসি, তপশিলি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা নম্বরের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ছাড় পাবেন। ২) যাঁরা চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষায় বসবেন বা যাঁদের চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি তাঁরাও শর্তসাপেক্ষে এই পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ৩) পিএইচডি ডিগ্রিধারী যাঁরা ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১-এর মধ্যে মাস্টার ডিগ্রি করেছেন তাঁরাও নম্বরের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ছাড় পাবেন। ৪) পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন স্তরে যে বিষয় ছিল সেই বিষয়েই আবেদন করতে হবে। কোন-কোন বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করলে নেট পরীক্ষা দিতে পারবেন এবং যেসমস্ত প্রতিষ্ঠান এই নেট পরীক্ষার ব্যাবস্থাপনায় আছে তার তালিকা এবং সাবজেক্ট কোড পাবেন www.cbsenet.nic.in ওয়েবসাইটে।
বয়সসীমা: অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পদের ক্ষেত্রে ১ জুলাই ২০১৮ তারিখ অনুযায়ী বয়স হতে হবে ৩০ বছরের মধ্যে। মহিলা, তপশিলি, ওবিসি (নন-ক্রিমিলেয়ার) ও শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা বয়সের ঊর্ধ্বসীমায় ৫ বছর পর্যন্ত ছাড় পাবেন। গবেষণার অভিজ্ঞতা যাঁদের আছে তাঁরা গবেষণার সময়কাল ছাড় পাবেন সর্বাধিক ৫ বছর পর্যন্ত। এলএলএম ডিগ্রিধারীরা ৩ বছর পর্যন্ত বয়সের ছাড় পাবেন। সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করে থাকা প্রার্থীরাও ৫ বছর পর্যন্ত ছাড় পাবেন। কারও ক্ষেত্রেই বয়সের ছাড় কোনো ভাবেই ৫ বছরের বেশি হবে না।
তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীরা বয়সসীমা, নম্বর, ফি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তপশিলি প্রভৃতি প্রার্থীদের সমান ছাড় পাবেন।
পরীক্ষাপদ্ধতি: পরীক্ষা হবে ২ পেপারের, ৮ জুলাই ২০১৮ রবিবার। সারাদেশে ৯১টি শহরে এই পরীক্ষা হবে ৮৪টি বিষয়ে। দুটি পেপারেই প্রশ্ন হবে অবজেক্টিভ টাইপের।
পেপার ওয়ানে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। ৫০টি প্রশ্ন থাকবে। সব প্রশ্নই বাধ্যতামূলক। প্রতিটি প্রশ্নের মান ২। পরীক্ষার সময় ১ ঘণ্টা (সকাল সাড়ে নটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত)। প্রার্থীর টেকনক্যাল/রিসার্চ অ্যাপ্টিটিউড যাচাইয়ের জন্য প্রশ্ন থাকবে রিজিনিং এবিলিটি, কম্প্রিহেনশন, ডাইভারজেন্ট থিঙ্কিং (বহুমুখী চিন্তাশক্তি) এবং জেনারেল অ্যাওয়্যারনেস বিষয়ে।
পেপারটু-তে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে, নিজের নির্বাচিত বিষয়টির ওপর (আগেকার পেপার-টু ও পেপার-থ্রি পুরোটা)। ১০০ প্রশ্ন থাকবে। সব প্রশ্নই বাধ্যতামূলক। প্রতিটি প্রশ্নের মান ২। পরীক্ষার সময় ২ ঘণ্টা (সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা)। প্রশ্ন হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে।
পরীক্ষার বিস্তারিত তথ্য ও সিলেবাস পাবেন www.ugc.ac.in/net/syllabus.aspx ওয়েবসাইটে। কোনো অ্যাডমিটকার্ড পাঠানো হবে না। উপরের ওয়েবসাইট থেকে কার্ড ডাইনলোড করতে হবে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ওয়েবসাইটে অ্যাডমিট কার্ড পাওয়া যাবে, ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে পাঠানো হবে না। পরীক্ষার দিন অ্যাডমিট কার্ড ছাড়াও একটি ফটো আইডেন্টিটিকার্ড সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
আবেদনেরফি: ফি বাবদ দিতে হবে ১,০০০ টাকা। ওবিসি (নন-ক্রিমি লেয়ার)-র ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা এবং তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ২৫০ টাকা। টাকা দিতে হবে ডেবিট/ ক্রেডিট কার্ড-এর মাধ্যমে বা ব্যাঙ্ক চালান পূরণ করে নগদে। অফলাইনে ফি দিতে চাইলে অনলাইনে আবেদন সাবমিট করার পর চালান পেয়ে যাবেন। সেই চালানের প্রিন্ট-আউট নিয়ে সিন্ডিকেট / কানাড়া/ আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের যে-কোনো শাখায় গিয়ে টাকা জমা দিতে হবে ৬ এপ্রিল ২০১৮ তারিখের মধ্যে। ডেবিট / ক্রেডিট কার্ড/ব্যাঙ্কিং চার্জ অতিরিক্ত, সার্ভিস ট্যাক্সও আছে। টাকা দেওয়ার পর সব ঠিকঠাক হলে ‘ওকে’ বলে জানানো হবে এবং তখন কনফার্মেশন পেজের প্রিন্ট-আউট নিয়ে নেবেন। ‘ওকে’ জানানো না হলে যে ব্যাঙ্কে চালানে টাকা জমা দিয়েছেন সেখানে অবিলম্বে যোগাযোগ করে আপডেট করতে বলবেন। ডেবিট /ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ‘ওকে’ না হলে বুঝবেন ট্র্যানজাকশন বাতিল হয়েছে, সেক্ষেত্রে সেই টাকা ১ সপ্তাহের মধ্যে ফেরত পাবেন, তবে আপাতত নতুন করে টাকা দিতে হবে।
আবেদনেরপদ্ধতি: www.cbsenet.nic.in ওয়েবসাইটে অনলাইন আবেদন করতে হবে ৬ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল ২০১৮-র মধ্যে। ভুল-ত্রুটি ঘটে থাকলে সংশোধন করা যাবে ২৫ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত। আবেদনের জন্য খুঁটিনাটি নিয়ম-নির্দেশ এবং ফি সংক্রান্ত তথ্য ইত্যদি পাওয়া যাবে ওয়েবসাইটে। আবেদন করার আগে নিজের একটি পাসপোর্ট মাপের ছবি (৩.৫×৪.৫ সেমি) জেপিজি ফরম্যাটে স্ক্যান করে নেবেন। তার মাপ ৪ থেকে ৪০ কেবি-র মধ্যে হতে হবে। নিজের স্বাভাবিক স্বাক্ষরও স্ক্যান করে রাখতে হবে (৩.৫ × ১.৫ সেমি, ৪-৩০ কেবি)। এগুলি আপলোড করতে হবে। ফর্ম সাবমিট করার পর অনলাইনে পূরণ করা ফর্ম অ্যাটেনডেন্স স্লিপ ও অ্যাডমিশন কার্ডের প্রিন্ট-আউট নিতে হবে প্রতিটি আলাদা-আলাদা এ-৪ মাপের কাগজে। পরীক্ষা কেন্দ্রের তালিকা ও কোড (যেমন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কলকাতার কোড ৯১, বর্ধমান ৮৯, দার্জিলিং ৯০), সাবজেক্ট কোড, রাজ্য কোড (যেমন পশ্চিমবঙ্গের কোড ২৬), সেন্টার কোড এবং মিডিয়াম কোড ইত্যাদি পাবেন ওয়েবসাইটে।