বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

4686
0

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৩৮ এর ২৬ জুন অধুনা উঃ ২৪ পরগনার নৈহাটির কাঁঠাল পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।বাংলা ভাষা সাহিত্য যে কজন লেখকের লেখার গুণে বিশ্বসাহিত্যে অন্যতম মর্যাদা অর্জন করেছে তাঁদের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অগ্রগণ্য।অত্যন্ত মেধাবী বঙ্কিম শৈশবেই স্কুলের পড়ার বাইরে বিভিন্ন বই পড়ে নিজের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছিলেন। তারমধ্যে সংস্কৃত সাহিত্য ও ভাষা তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছিল।পরবর্তীকালে তাঁর কলমে সেই ভাষার ছাপও প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে।তাঁর পরে আর কোনো লেখকই এমন ভাষায় গদ্য রচনা করতে পারেননি।ভাষার ব্যবহারের গুণেই বঙ্কিম অনন্য ও স্বতন্ত্র হয়ে রয়েছেন বাংলা সাহিত্যের ধারায়।যখন তিনি জন্মেছিলেন সেদিন আকাশে উজ্জ্বল চাঁদের অবস্থান দেখে পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর নাম রেখেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র।বঙ্কিমচন্দ্রের যখন জন্ম হয় তখন পিতা যাদবচন্দ্র মেদিনীপুরের ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন।বঙ্কিমচন্দ্রের ছোটবেলার কয়েক বছর লেখাপড়া সেখানেই কেটেছে।সেখানকার পড়াশেনোর পাট চুকিয়ে হুগলি মহসিন কলেজে ভর্তি হন। হুগলি কলেজে ১৮৫৬ সালে সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় সব বিষয়ে কৃতিত্ব অর্জন করেন এবং ২০ টাকা বৃত্তি পান।হুগলি কলেজ ছেড়ে আইন পড়ার জন্য কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষা প্রবর্তন করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজের আইন বিভাগ থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।১৮৫৮ সালে প্রথম বারের মতো বিএ পরীক্ষা নেওয়া হয়। যে দশ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে যে দুজন উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তাঁরা হলেন বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু।বিএ পাশ এবং ডেপুটি কালেকটর হিসেবে সরকারি চাকরিতে বহাল হন।জীবনের ৩২ বছর সরকারি চাকরির কালে বিচারকের আসনেও বসেছিলেন। বিভিন্ন জেলায় তাঁকে চাকরি সূত্রে ঘুরতে হয়েছিল। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ শৈশব থেকেই।ছোটবেলায় কবিতা দিয়ে হাতে খড়ি।তারপর একে একে কালজয়ী সব রচনা।১৮৬৫ সালে প্রকাশিত `দুর্গেশনন্দিনী’ তাঁর রচিত প্রথম সামাজিক উপন্যাস হিসেবেই বিবেচিত।তারপর একে একে `কপালকুণ্ডলা’,`মৃণালিনী’, `বিষবৃক্ষ’, `চন্দ্রশেখর’, `রাজসিংহ’, `রজনী’, `দেবী চৌধুরাণী’, `আনন্দ মঠ’(১৮৮২)।ভারতের জাতীয়তাবাদকে উদ্বুদ্ধ করতেই এই আনন্দমঠেই উচ্চারিত হয়েছিল `বন্দেমাতরম’ সংগীত।যা পরবর্তী কালে ভারতের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পায়। তাঁর লেখার গুণে তাঁকে স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত ঐতিহাসিক উপন্যাস রচয়িতা ও কবি ওয়াল্টার স্কটের সঙ্গে তুলনা করা হয়।কমলাকান্ত ছদ্ম নামে প্রহসন মূলক রচনা সামাজিক দর্পণ।তাঁর সম্পাদনায় `বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা সেকালের শ্রেষ্ঠ মাসিক পত্রিকা ছিল।শুধু উপন্যাসই নয়, ছোট গল্পেও তাঁর প্রখর লেখনী শক্তির পরিচয় রেখে গিয়েছেন।১৮৯১ সালে রায় বাহাদুর খেতাব পেয়েছিলেন।১৮৯৪ সালে পেয়েছিলেন `কম্প্যানিয়ন অফ দ্য মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পারার’ খেতাব। `সাহিত্য সম্রাট’ হিসেবেও তাঁকে ভূষিত করা হয়েছিল।তাঁর রচনা বিশ্বের বহু ভাষায় অনূদিতই শুধু হয়নি, বাংলা ভাষা যে কত সমৃদ্ধ কত শক্তিশালী তারও প্রমাণ রেখেছেন বঙ্কিমচন্দ্র। ১৮৩৮ এর ২৭ জুন জন্মে ছিলেন। মৃত্যু ১৮৯৪ এর ৮ এপ্রিল। মাত্র ৫৬ বছরের জীবন, কিন্তু ১৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা ভাষার পরমোজ্জ্বল দীপ্তি ছড়িয়ে জীবন্ত হয়ে রয়েছেন।