ভাস্কর ভট্টাচার্য
ক্রিকেট মাঠে দাপিয়ে খেললেও চিকিৎসা পেশাকে ভোলেননি তাঁরা। তাঁরা কেউ ইংল্যান্ডের, কেউ অস্ট্রেলিয়ার আবার কেউ দক্ষিণ আফ্রিকার স্বনামধন্য খেলোয়াড় ছিলেন। শোনা যাক তাঁদের কথা
ডব্লু জি গ্রেস।
ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটের জনক। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ক্রিকেট ব্যক্তিত্বদের এক অগ্রণী পুরুষ। পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। সবাই ডক্টর বলেই সম্বোধন করতেন তাঁকে। পাঁচ দশক ক্রিকেট মাঠে খেলার পাশাপাশি নিয়মিত চিকিৎসাও করে গেছেন সাধারণ মানুষের। এমনকী ক্রিকেট মাঠেই খেলা চলাকালীন প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের জীবন বাঁচিয়েছিলেন।
জ্যাক ব্যারেট
অস্ট্রেলিয়ার এই ক্রিকেটার ১৮৯০ সালে অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফর করেছিলেন। ওপেনিংয়ে নেমে ২৮০ মিনিট ব্যাট করে তাক লাগিয়ে দিয়ছিলেন। চিকিৎসক পরিবারে জন্ম নেওয়া এই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি চিকিৎসা করতেন সাধারণ মানুষের।
ডক্টর আলি বাখার
দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়ক ছিলেন। ষাটের দশকে চারটে টেস্ট খেলে চারটিতেই জয় পেয়েছিলেন। একসময় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির বড় কর্তা হয়েছিলেন। চিকিৎসক পরিচয় ভোলেননি। সবসময় নিজের নামের আগে ডক্টর উপাধিটা লিখতেন।
জিওফ লসন
অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার হিসেবে পরিচিত। ৪৬টি টেস্টে খেলেছেন। পাকিস্তান দলের কোচও হয়েছিলেন। ছিলেন চক্ষুচিকিৎসক। নিউ সাউথওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন।
ক্রিস হ্যারিস
মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি খেলা। ব্যাট এবং বল দুটোতেই দক্ষ ছিলেন। নব্বই দশকের সাড়া জাগানো খেলোয়াড় ছিলেন।
আমরা যদি ক্রিকেট দুনিয়ার খবর নিই তাহলে এমন উদাহরণ, আরও কিছু মিলবে। যাঁরা ডাক্তারি পড়ার বাসনা নিয়েও ক্রিকেট জগতে স্বপ্নপূরণের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তার বড় উদাহরণ, ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসে উজ্জ্বল রেকর্ডধারী ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণ। ডাক্তার পিতার সন্তান লক্ষ্মণ পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী শুধুনন, ডাক্তারি পড়ে একজন ডাক্তার বনেও বাইশ গজের মাঠকেই বেছে নিয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেট দলে নির্বাচিতহয়ে তিনি শুধু সফল ক্রিকেটারই নন, দেশকে অনেক সম্মান এনে দিয়েছেন।
দেশে, বিদেশেও উদাহরণ আরও আছে, যেমন দক্ষিণ অস্ট্রলিয়ার ডানহাতি ব্যাটসম্যান ড্যানিয়েল হ্যারিস। অলরাউন্ডার এই ক্রিকেটার ১৯৯৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ক্রিকেট খেলেছেন। বিভিন্ন প্রথম সারির ক্লাবের হয়ে। মেলবোর্নে, রাউজান রয়েল প্রভৃতি ক্লাবে। খেলার জগত থেকে অবসর নেবার পর পুরোপুরি ডাক্তারিকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
পাকিস্তানের অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিমও তালিকায় পড়েন।
শচীন তেন্ডুলকর ‘লিটলমাস্টার’ না হলে একজন ডাক্তারই হতেন। একথা নিজেই বলেছেন শিশুদের এক স্কুলে গিয়ে, ‘আমি যদি সফল ক্রিকেটার না হতাম, তাহলে হয়তো ডাক্তার হতাম।
ক্রিকেট এবং ডাক্তারি একইসঙ্গে করেছেন অনেক ক্রিকেটার। আবার অনেক ক্রিকেটার মাঠে সফল নাহলে ডাক্তারিতেও সফল হবার স্বপ্ন দেখেছেন। ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক উদাহরণ রয়েছে।
শুধু কি ডাক্তারি? অনেক কাছেই হয়তো অজানা ভারতের নব্যক্রিকেটার অমিয় কুরেশিয়া বর্তমানে একজন ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ক্রিকেট দুনিয়ায় আসার আগে সফল আইএএস। লক্ষ্মণেরর মতো ক্রিকেটকেই জীবনের স্বপ্নপূরণের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
কেউ-কেউ ডাক্তারির পাশাপাশি ক্রিকেটকে রেখেছেন। আবার কেউ ডাক্তারি ছেড়ে ক্রিকেটমাঠে ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
তথ্য: প্রথম আলো