ছোট গল্প দিয়ে হাতে খড়ি. পূর্ণ দৈঘ্যের চলচ্চিত্র এবং দেশের সবথেকে বড় সম্মান পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন উর্দু রক্ষণশীল পরিবার থেকে উঠে আসা লেখিকা ইসমত চুঘতাই। লেখিকা, স্কুলশিক্ষিকা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার থেকে অনেক-অনেক শিল্পী কলাকুশলীদেরও জায়গা করে দিয়েছিলেন ভারতীয় সিনেমার জগতে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ইসমত চুঘতাই এক অবিস্মরণীয় নাম। পঞ্চাশের দশকে তাঁর লেখা গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছিল একের পর এক জনপ্রিয় ছবি। আরজু, জিদ্দি সোনেকা চিড়িয়া, সিকায়ত, বাজ দিল, ফারিব, সিসা প্রভৃতি সিনেমা সহ গত শতকের সাতের দশকে জুনুন, গরম হাওয়া-র মতো ছবি। পেয়েছেন বেস্ট ফিল্প ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। বেস্ট স্টোরি রাইটার-এর পুরস্কার। ১৯৮৪ সালে পেয়েছিলেন গালিব অ্যাওয়ার্ড। গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব ফিল্ম প্রোডকশন হাউস ‘ফিল্মিনা’। ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে তাঁর প্রতিটি লেখাই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এক মুসলিম রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করে সমসময়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন এই লেখিকা। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন তাঁর অসংখ্য লেখার মধ্য দিয়ে। নারীর অন্তরজীবনের অবরুদ্ধ ভাষা নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। নারী শুধু অবরোধবাসিনীই নয়, সমসাময়িক দৃষ্টিতে দেখেছেন অতৃপ্ত নারীর অব্যক্ত যন্ত্রণা। আর সাহসী সমকামী নারীর কথা লেখার জন্য আদালত পর্যন্ত উঠতে হয়েছিল তাঁকে। তবুও তাঁকে থামানো যায়নি তাঁর সাহসী লেখার জন্য। আজ থেকে একশো বছর আগে (১৯১৫, ২১ আগস্ট) যোধপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইসমত চুঘতাই। দশ ভাইবোনের নবম তিনি। ছোটবেলা কেটেছে যোধপুর, আগ্রা এবং আলিগড়ে। বাবা ছিলেন সিভিল সার্ভেন্ট। আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হয়ে আরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান। বিএড করে প্রধান শিক্ষিকার পদে চাকরি জীবন শুরু। একদিকে চাকরি অন্যদিকে লেখা। ১৯৩৯ সালে ‘ফাসাদ’ প্রথম ছোটগল্প প্রকাশিত হবার সঙ্গে-সঙ্গেই সাড়া পড়ে যায়। ছোট রচনা ‘লিহাফ’ লেখার জন্য আদালতের সমন। সম্পাদিত বই ‘অঙ্গারে’। জিদ্দি নভেল প্রথম ইরেজিতে অনুবাদ হয়ে লেখক চুঘতাইকে আরও পরিচিতি দিল। তারপর ‘দ্য ক্রুকেড লাইন’, ‘দ্য কুইল্ট অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ সহ একের পর এক লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ হওয়ার ফলে চুঘতাইয়ের লেখার মধ্যে ও হেনরি, আন্তন চেকভ, সিমোন দ্যো বোভোয়া-র ছায়া খুঁজে পেলেন সমালোচকরা। আবার কেউ-কেউ তাঁর লেখার সঙ্গে বানার্ড শর নামও তুললেন। এমন খ্যাতি নিয়েই ১৯৪২ সালে স্কুলের পরিদর্শকের চাকরি নিয়ে বোম্বাই পাড়ি দিলেন। সেখানে লেখালেখির সঙ্গে-সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন সিনামার জগতেও। লিখলেন একের এক চিত্রনাট্য। আলোড়ন তোলা সিনেমা আর ইসমত চুঘতাই একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছিল সেই দিন। ১৯৯১ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। আজও তিনি তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বেঁচে আছেন দর্শক পাঠকের হৃদয়ে।