শারীরিক ও মানসিক বিকাশে যোগব্যায়াম জরুরি

5005
0
Govt Jobs in Birbhum 

সুপর্ণা মণ্ডল

শরীরচর্চা বিশেষজ্ঞ

স্কুল অব ফিটনেস অ্যান্ড পার্সোন্যালিটি ডেভেলপমেন্ট

আজকের ছেলেমেয়েদের জীবনটা কেমন? ভারী স্কুলব্যাগ পিঠে নিয়ে স্কুল, স্কুল শেষে রাস্তাতেই প্রায় টিফিন সেরে দৌড়াতে হয় প্রাইভেট টিউশনে, তারপর কোনোমতে ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে বাড়ি ফেরা, খাওয়া, ঘুম আবার পরদিন সেই একঘেয়ে জীবন। না আছে মনের আনন্দে খেলাধূলা, না আছে শরীরচর্চা। অষ্টম শ্রেণির আগে যাও বা সুযোগ থাকে, অষ্টম শ্রেণিতে উঠে গেলে যেন তাও হারিয়ে যায়। কারণ দু বছর বাদেই মাধ্যমিক, তারপর উচ্চ মাধ্যমিক। এরপর ছেলেমেয়েকে ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার বানানোর নেশায় বাবা-মায়ের মরিয়া চেষ্টার কাছে কিশোরবেলার সব আনন্দ হারিয়ে যায়। বিনোদন বলতে ভিডিও গেমস বা ইন্টারনেট। এই একপেশে জীবনযাত্রার ফলে দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ অল্প বয়সেই নানা অজানা অসুখের শিকার হচ্ছে। চোখ খারাপ থেকে শুরু করে ঘাড় ব্যথা, কোমর ব্যথা, থাইরয়েড সমস্যা, বাড়তি ওজন বা কারও ক্ষেত্রে রুগ্নতা প্রভতি থাবা বসাচ্ছে। এমনকি ডায়াবেটিস, রক্তচাপ জনিত যেসব অসুখ আগে সাধারণত একটু বেশি বয়সে হত তা এখন ছাত্রজীবনেও দেখা যাচ্ছে। এছাড়া অত্যধিক চাপের ফলে নানা মানসিক অস্থিরতার শিকার হচ্ছে এইসব ছেলেমেয়েরা।

নিজের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন ছেলেমেয়েদের মধ্যে দিয়ে পূরণ করতে গিয়ে বাবা-মায়েরা ভুলে যাচ্ছেন যে এতে আখেরে লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। এটা দুনিয়া জুড়ে স্বীকৃত যে মনের বিকাশের জন্যেও শরীরের বিকাশ খুব জরুরি। শরীরচর্চা করলে মস্তিষ্ক থেকে শরীরের সর্বত্র যে তাজা রক্তের চলাচল হয় এবং পেশি, শিরা-উপশিরা তাজা হয়ে ওঠে, এতে মনেরও বিকাশ হয়, আর বাড়ন্ত বয়সের একজন ছেলে বা মেয়ে অনেক কম সময়ে তার পড়ার বিষয়গুলি আয়ত্ত করে নিতে পারে। না হলে মনঃসংযোগের অভাবে একই পড়া আয়ত্ত করতে তার লেগে যাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে অদ্ভুত অস্থিরতা থেকে শুরু করে ঘাড় ব্যথা, পিঠ ব্যথার মত যে অসুখগুলি আজকের দিনের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে খুবই দেখা যাচ্ছে, দূর করার ক্ষেত্রে নিয়মিত যোগাসন ও অন্যান্য ব্যায়াম খুবই উপকারী। যোগাসন ও খালি হাতের নানা ব্যায়াম অল্প বয়সের ছেলেমেয়েদের শারীরিকভাবে সক্ষম করে তোলার পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্রকে চাঙ্গা করে মনঃসংযোগের ক্ষমতাও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

দিনের শেষভাগে আমাদের সবারই শরীরের এনার্জি শেষ হয়ে যায় সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমে। এই শারীরিক এনার্জি ফিরিয়ে আনতে সহজতম স্বাস্থ্যসম্মত উপায়টি হল যোগব্যায়াম। বজ্রাসন, সূর‌্য নমস্কার, উঠবস করা, সাইকেল চালানো প্রভতি কয়েকটি ব্যয়াম যদি রোজকার তালিকায় রাখা যায় তাহলে খুবই উপকারিতা পাওয়া যায়।

সময় থাকতেই সাবধান হওয়া দরকার। কেরিয়ার গড়ার স্বার্থেই সুস্থতা দরকার। দরকার মনঃসংযোগ, রোগমুক্ত জীবন। তাই সারাদিনে অন্তত এক ঘণ্টা যাতে খেলাধুলো, খালি হাতে ব্যায়াম বা যোগাসন করা যায় সে দিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরি। বিশেষ করে বাড়ন্ত বয়সে খালি হাতে ব্যায়াম বা যোগাসনের উপকারিতার কথা তো বলে শেষ করা যাবে না। খাওয়াদাওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে মনোযোগী হওয়ার জন্যও যোগব্যায়াম করা জরুরি। খাদ্যাভ্যাস নিয়ে অনেক ধরনের জটিলতায় সমাধান দিতে পারে যোগব্যায়াম।

যোগব্যায়াম শারীরিক দিক থেকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি মানসিক দিক থেকেও আমাদের সুস্থ রাখে। অনেকক্ষেত্রে আমরা শারীরিক সুস্থতার দিকে নজর দিতে গিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের কথা একেবারেই ভুলে যাই। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলা করার মতো নয়। মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক না হলে নার্ভাস ব্রেকডাউনের মতো মারাত্মক সমস্যাও হতে পারে। মানসিক দিক থেকে সুস্থ থাকতে যে ব্যায়ামগুলি কার্যকর ভূমিকা নেয় তার মধ্যে অন্যতম হল মেডিটেশন বা ধ্যান। নিজের মনটাকে শান্ত রাখার বিষয়টি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। আর মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মেডিটেশন সবথেকে ভালো। মেডিটেশনের মাধ্যমে মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি, মনোযোগ বৃদ্ধি ও মানসিক চাপ দূর করার ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হয়। অনেক সময় পাজল গেম সমাধান করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের অনেক ভালো ব্যায়াম হয়। এই ধরনের ব্যায়ামের মাধ্যমে মস্তিষ্কে নতুন নিউরন অর্থাৎ নতুন কোশের জন্ম হয় যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। এছাড়াও এই ধরনের খেলার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে।

এছাড়া নিয়মিত যোগব্যায়ামের মধ্যে দিয়ে বাড়তি ওজন কমানো সম্ভব হয়। হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপের মতো মারাত্মক শারীরিক অসুখগুলো থেকে দূরে থাকা যায়। বিষণ্ণতা ও আর্থ্রাইটিসের মতো রোগ থেকে মুক্তি মেলে। তবে যোগাব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই কোনো শরীরচর্চা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।