হাতের মুঠোয় ভার্চুয়াল লাইব্রেরি

2599
0
vertual library picture

ভাস্কর ভট্টাচার্য

ধরুন একটা খুব প্রয়োজনীয় বই পড়ার জন্য কোনো লাইব্রেরিতে গেছেন কিন্তু সেই বইটি অন্য কোনো গ্রাহক তার আগেই নিয়ে পড়তে শুরু করে দিয়েছেন। লাইব্রেরিতে রয়েছে একটি মাত্র কপি। সব বই তো আর অনেকগুলো কপি রাখা যায় না, অতএব আপনি তা পাবেন না যতক্ষণ না সেই গ্রাহক তাঁর কাজ শেষ করে সেটি ফেরৎ দিচ্ছেন। কিন্তু এখন ইন্টারনেট-অ্যাপসের দৌলতে সেই বইটি চাইলে কয়েকশো জন একই সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসে পড়ে ফেলতে পারছেন। বর্তমান বই পড়ার দুনিয়ায় এমনই এক বিপ্লব ঘটে গিয়েছে এবং দিন-দিন আরও উন্নত প্রযুক্তির দিকে হাঁটছি আমরা। আর সেটাকেই সাহায্য করছে সর্বব্যাপী বা সর্বত্রগামী ইন্টারনেট। আজ পৃথিবীর যেখানেই যাই না কেন, কাফে কিংবা রাস্তায়, ট্রেনে-বাসে-ট্যাক্সিতে, অফিসে, পার্কে সর্বত্রই চোখে পড়বে নানা ঢঙের নানা মাপের মোবাইলে মানুষ হয় কথা বলছেন, নয় কথা লিখছেন বা নিবিষ্ট হয়ে আঁতিপাতি করে কিছু খুঁজে চলেছেন। মানুষের জীবনের পরিবর্তনে এই বস্তুটির ভূমিকা আজ অনস্বীকার্য। এর ব্যবহার দ্রুত আয়ত্ত করে নিচ্ছি সবাই। তা সে সোশ্যাল মিডিয়াই হোক কিংবা অনলাইন ব্যাঙ্কিং, ট্রেনের টিকিট থেকে শুরু করে বাড়ির বিদ্যুতের বিল, টাকা ট্রান্সফার থেকে শুরু করে অনেক কিছুরই মাধ্যম হয়ে উঠছে চলমান এই সঙ্গীটি। একে যিনি যেমনভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারছেন। ভাষাও আজ আর প্রতিবন্ধক নয় এর ব্যবহারে। তাই আমরা সহজেই এর মাধ্যমে পড়ে ফেলতে পারছি বিভিন্ন ভাষায় অসংখ্য বই বা পত্রিকাও। আর এটাকে ব্যবহার করেই যাতে ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি করে নিজেদের পড়ার অভ্যাস করে নিতে পারেন সে দিকে সব রকম সদর্থক প্রচেষ্টা চালানো উচিত এবং কোথাও-কোথাও তার উদ্যেগও নেওয়া হয়েছে। গড়ে উঠেছে বা উঠতে চলেছে ভার্চুয়াল লাইব্রেরি। যেখানে শুধুমাত্র একটি অ্যাপের নির্মাণ দ্বারা বৈদুতিন মাধ্যমে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, কিন্ডল প্রভৃতির সাহায্যে পড়ে ফেলতে পারে যে-কোনো বই, পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তে বসে। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছুটে যেতে হবে না কোনো লাইব্রেরিতে বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা খুঁজে এসে কোনো গ্রন্থাগারিকের কাছ থেকে শুনতে হবে না ‘নট ফাউন্ড’ বা ‘ইস্যু হয়ে গেছে’ ওই ধরনের কিছু নিয়মিত বাক্য। ভার্চুয়াল গ্রন্থাগার মানে হল যখন খুশি যেখানে খুশি মানুষের নাগালের মধ্যে আসবে বই। ওজনদার বই বয়ে নিয়ে যাওয়ার যেমন কোনো ঝামেলা থাকবে না, তেমনই এক সঙ্গে অনেকগুলি বই রাখার জন্য বিশেষ কোনো জায়গারও প্রয়োজন ফুরোবে। বই কেনো রে, তাকে যত্ন করে রাখো রে, পরিষ্কার করো রে, উইয়ের হাত থেকে বাঁচাও রে— হাজার ঝামেলার হাত থেকে রেহাই পেতে ভার্চুয়াল গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা দিন-দিন বাড়বে বই কমবে না। আমরা তো ইতিমধ্যেই অনলাইন সংবাদপত্র পড়ার অভ্যেসটা করে নিতে পেরেছি অনেকেই, অনেকের কাছে এক সঙ্গে অনেকগুলি কাগজ পড়া জল ভাত। স্পষ্টত, সাধারণ গ্রন্থাগারে গিয়ে যা-যা পাওয়া সম্ভব সেগুলি বর্তমানে ‘ডিজিটালি’ সম্ভব হয়ে উঠছে দিন-দিন। অতএব বৈদ্যুতিন গ্রন্থাগারের জনপ্রিয়তা দিন-দিন বাড়ছে। বই তো সময় ও ব্যবহারের সঙ্গে-সঙ্গে জীর্ণ হয়ে যায় কিন্তু বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সে ভয় থাকে না। বরং, নির্ভার এক বইয়ের জগৎ আমাদের কাছে সহজেই এক ক্লিকে উন্মুক্ত হয়ে যায়। বৈদ্যুতিন গ্রন্থাগারের দরজা এখন এক ক্লিকের খেল। মুহূর্তেই পাঠক পৌঁছে যান সাহিত্যের বিশ্বে, যেখানে পাঠকের জন্য দুনিয়ার তাবড়-তাবড় অতীত ও বর্তমানের লেখক, বিজ্ঞানী, ইতিহাস, ঘটনা উপস্থিত। খুলে যা্ছে জ্ঞানের অমোঘ ভাণ্ডার।

এই মুহূর্তে দুনিয়াজোড়া সমাদৃত কিছু ডিজিটাল লাইব্রেরি হল: ইউনিভার্সাল ডিজিটাল লাইব্রেরি (www.ulib.org), প্রজেক্ট গুটেনবার্গ (www.gutenberg.org), গুগল বুকস(https://books.google.com), ইন্টারনেট পাবলিক লাইব্রেরি(www.ipl.org) (এটি দীর্ঘ ২০ বছর চলার পর বন্ধ হয়ে গেছে, তাই নতুন কোনো আপডেট হয় না, কিন্তু আগের সব সংগ্রহই পড়া যায়) প্রভৃতি সাধারণ গ্রন্থাগারের পাশাপাশি এই ‘ভার্চুয়াল’ ভাবে পড়াশোনার অভ্যাস যত বাড়বে তত বেশি পাঠক সহজেই খুঁজে নিতে পারবেন তাঁর প্রয়োজনীয় বইটি। সমৃদ্ধ হবে জ্ঞানের পরিধি। ডিজিটাই লাইব্রেরির মস্ত সুবিধা বই হারানোর কোনো ভয় নেই। কাগজবিহীন ব্রহ্মাণ্ডময় পাঠশালায় একজন মনোগ্রাহী পাঠক হয়ে উঠতে তাই প্রয়োজন হাতের যন্ত্রটির সদুদ্দেশ্যে ব্যবহারের মানসিকতাটি তৈরি করা।