ইঞ্জিনিয়ারিং ডে : বাঁধ ও ব্রিজ নির্মাণের ‘ভারতরত্ন’ বিশ্বেসরাইয়া

993
0
visvesvaraya

তাঁর জীবনের প্রথম এবং প্রধান কথাই ছিল ‘ওয়র্ক ইজ ওয়র্কশিপ’। বাবা ছিলেন একজন সংস্কৃতের শিক্ষক। সেই শিক্ষকের ছেলে একদিন শুধু ভারতবর্ষই নয়, বিশ্বের অনেক প্রান্তে তাঁর কৃতিত্বের সম্মান কুড়িয়েছেন। তাঁর সময়ে তাঁর নেতৃত্বে এশিয়ার প্রথম বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ করে সবার নজর কেড়ে নিয়েছিলেন। ‘ভারতরত্ন’ উপাধি পাওয়া বিশিষ্ট এই ইঞ্জিনিয়ার এম বিশ্বেসরাইয়া। পুরো নাম মকসগুন্ধম বিশ্বেসরাইয়া। ব্রিটিশ ‘নাইট’ উপাধি বা সম্মানও পেয়েছিলেন। তাই তাঁর নমের আগে স্যার বসানো হয়। ভারতের সেচবাঁধ তৈরির নকশা প্রস্তুতকারকদের একজন। আজ প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটেছে। কিন্তু সেই অতীতে তিনি তাঁর কৃতিত্ব ও বিদ্যার পরিচয় রেখেছেলিনে। কৃষ্ণরাজ সাগর বাঁধ তৈরি করে ১৯২৪ সালে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। যার ফলে আশপাশের বহু শহরের মানুষ উপকৃত। তাঁর জীবন নিয়ে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। কেউ-কেউ বলেন প্রায় ৬০ কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুল করেছেন। রাতের রাস্তার আলোয় পড়াশেনো করেছেন।

বেঙ্গালুরু ইউনাইটেড মিশন স্কুল, ইউনিভার্সিটি অব মাদ্রাজ, পুণের কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে প্রথম জীবনে বোম্বাইয়েই কর্মজীবন শুরু করেন। ভারত সরকার সেই সময় এই তরুণ ইঞ্জিনিয়ারকেই ইয়েমেন–এ পাঠিয়েছিলেন জল সরবরাহ ও পয়ঃপ্রণালি সংক্রান্ত রূপরেখা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য। সেই অভিজ্ঞতা ভারতে প্রয়োগ করেছিলেন এবং সফলও হয়েছিলেন। এমনকি জীবনের ৯০ বছর বয়সে তাঁর মেধা ও অভিজ্ঞতায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিহারে গঙ্গার ওপর মোকাম ব্রিজ নির্মাণে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর প্রযুক্তিবিদ্যার পরিচয় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কর্নাটকের এক অখ্যাত গ্রামে জন্ম হয়েছিল এই ইঞ্জিনিয়ারের। শুধু বাঁধ বা ব্রিজ নির্মাণেই নয়, তাঁর তত্ত্বাবধানেই গড়ে উঠেছিল মাইসোর সোপ ফ্যাক্টরি, যোগ ফলস পাওয়ার প্রজেক্ট-এর মতো বৃহৎ শিল্প কারখানা।

১৯১৭ সালে বেঙ্গালুরুতে যে বৃহৎ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়ে উঠেছিল তাতে তাঁর অবদান ছিল সর্বাধিক। সেই কলেজই পরবর্তীকালে বিশ্বেসরাইয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম নামে প্রসিদ্ধ। ৫০ বছরে প্রায় চার কোটি দর্শক এই কলেজ ও মিউজিয়াম পরিদর্শন করেছেন। বেঙ্গালুরুর প্রাণকেন্দ্রে গড় ওঠা এই কলেজ আজ দেশে-বিদেশে সমাদৃত। তাঁর জন্মস্থানও তাঁর নামে গড়ে উঠেছে এক শিক্ষাঙ্গন হিসেবে। ১৯০৯ সালে মহীশূরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার-এর পদ অলংকৃত করেন। ১৯১২ সালে ‘দেওয়ান’ উপাধি লাভ করেন। ১৮৬১ সালের ১২ এপ্রিল জন্ম। ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬২-তে প্রয়াণ ঘটে। প্রতি বছর তাঁর এই দিনটিকে স্মরণ করা হয় ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ হিসেবে।