নাগাল্যান্ড: প্রথম দুই মহিলা বিধায়ক

960
0
Nagaland
Courtesy: India Today

প্রতিবেদক: ভাস্কর ভট্টাচার্য

সদ্য প্রকাশিত হল উত্তর-পূর্ব ভারতের তিনটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফল। নাগাল্যান্ড, মেঘালয় এবং ত্রিপুরা। এই ভোটের ফলেই নাগাল্যান্ড এক অনন্য নজির গড়ল।

এই প্রথম দুই মহিলা বিধায়ক হলেন এই রাজ্য থেকে। যা কিনা পৃথক রাজ্য হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার পর। এর মধ্যে এক জন হেকানি জাখালু।

৪৮ বছরের হেকানি আইনজীবী হিসেবেই বেশি পরিচিত।দ্বিতীয় জন সালহউতুওনুও ক্রুজে (Salhoutuonuo Kruse) স্থানীয় এক হোটেলের মালিক।

চলতি বছর নাগাল্যান্ড বিধানসভা ভোটে যে ১৮৩ জন প্রার্থী লড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে মোট চার জন ছিলেন মহিলা।

সেই চার জনের মধ্যে দুজনকে জেতালেন উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের মানুষ। সেই তিনটি রাজ্যের মধ্যে নাগাল্যান্ডের কথা তুলে ধরা হল।

আয়তন- ১৬, বর্গকিমি, রাজধানী- ভাষা- ইংরেজি, আও, কোনিয়াক, লোথা প্রভৃতি, জনসংখ্যা-  ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ১,৯৮০,৬০২ জনসংখ্যা আছে, এটি ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্যগুলির মধ্যে একটি ।

ঐতিহাসিক নথিগুলি দেখায় যে ১২২৮ সালে অহোমদের আগমনের আগে বর্তমান সময়ের নাগারা বসতি স্থাপন করেছিল। বার্মিজ শব্দ Na-Ka  বা ‘নাগা’ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ “কানের দুলওয়ালা মানুষ।’’

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিশেষ পরিচিত নাগাল্যান্ড। উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড় ও প্রকৃতি ঘেরা সুদৃশ্য মনোরম রাজ্যগুলির মধ্যে নগাল্যান্ড শুধু প্রাকৃতিক বৈভবেই নয়, নিজস্ব সাংস্কৃতিক গৌরবেও উজ্জ্বল।

এক দিকে আসামের ব্রহ্মপুত্র, মায়ানমার, অন্যদিকে মণিপুর, অরুণাচলপ্রদেশ প্রভৃতির সহাবস্থানে নাগাল্যান্ড বহু উপজাতি সমন্বিত এক রাজ্য। নাগাল্যান্ডকে মূলত উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল বললেও অত্যুক্তি হয় না। নাগাল্যান্ডের প্রধান শহর ও রাজধানী কোহিমা।

ভারতের ষোলতম রাজ্য হিসেবে ১৯৬৩ সালের ১ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ডের জন্ম। ভারতের হিল রাজ্য হিসেবে পরিচিত। কোহিমা, ফেক, ডিমাপুর, তুয়েনসাং, উখা, মোন, প্রভতি মোট ১১টি জেলা এর অন্তর্গত। এই সব অঞ্চলে অঙ্গামি,

জেলিয়াং, রেংমা, কুকি, সিমা, লোথা, চ্যাং, সাংটম প্রভতি জনজাতির বাস। এদের মূল অর্থনীতির অনেকটাই নির্ভর করে কৃষির ওপর। যদিও বর্তমানে অনেক শিল্প গড়ে উঠেছে বা উঠছে। প্রধান জীবিকা কৃষি।

এখানে আজও ঝুম পদ্ধতিতে চাষ হয়। প্রধান নদ-নদী হল ধানসিড়ি, দেয়াং, দিঘু ও ঝানজি। প্রধান শস্য, ধান , ভুট্টা, ডাল, তামাক, তৈলবীজ, আখ, আলু প্রভতি চাষ হয়। পর্যটন, ফরেস্ট্রি, বিমা, রিয়েল এস্টেট ছাড়াও নানা ধরনের কুটির শিল্প রয়েছে। বিশ্বের  ফ্যালকন রাজধানী নামে পরিচিত।

১৯৬০ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও নাগা পিপলস কনভেশনের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। অবশেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯৬৩ সালের ১ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ড ভারতবর্ষের ১৬তম নতুন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

প্রথম নাগাল্যান্ড বিধ্যানসভা গঠিত হয় ১৯৬৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। রাজধনী হিসেবে ঘোষিত হয় কোহিমার নাম।

মহাভারতেও নাগাল্যান্ড নাগারাজ্য হিসেবে বর্ণিত। অর্জুন নাগকন্যা উলূপীকে বিয়ে করেছিলেন।

প্রাকৃতিক বৈচিত্র‌্যের কারণেই নাগাল্যান্ড পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। এখানকার অধিকাংশ বাড়ি ঘরই কাঠের তৈরি। নাগাল্যান্ডবাসীদের মধ্যে চুরির ঘটনা খুবই কম।

সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে তালা চাবির ব্যবহার নেই বললেই চলে। সামান্য কাঠের টুকরো `কার্মি’ দিয়েই দরজা বন্ধের কাজ চালিয়ে দেয়। লোক- সংগীত ও বিভিন্ন ধরনের লোকনৃত্য তাদের মূল সংস্কৃতি।

নাগা সংগীত খুবই রোমান্টিক। রাজ্যের ৬০ শতাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর জীবনযাত্রা নির্বাহ করে, তাই তাদের বিভিন্ন উৎসবও কৃষি উৎপাদন ও জমিকে ঘিরেই।

নানাবিধ নৃত্য সংগীত নাগাল্যান্ডবাসীদের সংস্কৃতিকে স্বতন্ত্র করেছে। বিভিন্ন জাতের পাখি এখানে দেখতে পাওয়া যায়। সে সবের মধ্যে ধনেশ পাথি বিশ্বখ্যাত।

আর এই পাখিকে ঘিরেই এই রাজ্যে ২০০০ সাল থেকে সরকারের পর্যটন বিভাগের উদ্যোগেই রাজ্যে গড়ে উঠেছে এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। প্রতি বছর ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর উতসব পালিত হয়।

এই উত্সবকে ঘিরে গোটা নাগাল্যান্ড বর্ণময় হয়ে ওঠে। সমস্ত মানুষ এতে অংশগ্রহণ করে। এই রাজ্যের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীও রয়েছেন।

উত্তর-পূর্ব ভারতের তিনটি রাজ্য মেঘালয়, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ড দেশের বৃহত্ খ্রিস্টধর্মাবলম্বী মানুষের বাস। কোহিমা, ডিমাপুর, মককুচং জায়গায় অনেক চার্চ রয়েছে। নাগাল্যান্ড বিশ্বের একমাত্র প্রধানত ব্যাপ্টিস্ট রাজ্য হিসেবে চিহ্নিত।